জুমবাংলা ডেস্ক: সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শরণখোলা গ্রামের ১৫০টি পরিবারের বাড়ি-ঘর পুকুর তলিয়ে গেছে। সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে বাগেরহাট সদরের রহিমাবাদ ও চাঁপাতলা গ্রামে পানিঢুকে পড়েছে। ১৮৬ হেক্টর জমির বোরো ধান ও ১ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে বেশ কিছু মৎস্য ঘের, ভেঙ্গে গেছে অসংখ্য কাঁচা ঘর-বাড়ী। গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুটি উপড়ে গেছে।
তবে কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ নিজ-নিজ বাড়িতে ফিরছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান জানান, বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকায় বলেশ্বর নদী পাড়ের ২৫০ মিটার রিংবাধ ভেঙ্গে পানি বগি ও গাবতলা গ্রামে প্রবেশ করে। ইতিমধ্যে বাঁধ মেরামতের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জোয়ারের পর মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, বলেশ্বর নদী পাড়ের ৬২ কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে ৬০ কি.মি. বেড়িবাঁধের কাজ আগেই সমাপ্ত হয়েছিলো। বাকি ২ কি.মি. রিংবাঁধ স্থানীয় জমি মালিকদের স্বত্ব সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ও তাদের বাধার মুখে তখন সেটি করা সম্ভব হয়নি। তাই ২ কি.মি. রিংবাঁধ দেয়া রয়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আজ সন্ধ্যায় জানান, পূব সুন্দরবন বিভাগে সুপার সাইক্লোন আম্ফান তান্ডবে বনের বেশ কিছু গাছপালা, কয়েকটি জেটি,স্টাফব্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পুকুর জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। ফলে খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দূর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিমসহ ১১ হাজার ৭০৮ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরলস কাজ করে চলেছে।
বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। চারটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৯৭টি রিপার ও হ্যান্ড রিপার এবং স্থানীয় সেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ইতিমধ্যে মাঠের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে মাঠে থাকা বাকি ১৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে চেষ্টা করেও পুরাপুরি সফল হওয়া যায়নি। ফলে ১৮৬ হেক্টর জমরি বোরোধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এছাড়া জেলার ১৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে আউশধানের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন ফসল, পাট, মরিচ, পান ইত্যাদি ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে থাকা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সরাকার জেলার জন্য ২০০ টন চাল, নগদ ৩ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্যে, গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি জানান, জেলার কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু ফসল, মৎস্য ঘের, কাঁচা ঘর-বাড়ি ও গাছপালা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।