সুপার সাইক্লোন আম্ফান দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরের। সোমবার (১৮ মে) রাত ৯টা পর্যন্ত পায়রা থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল সাইক্লোনটি। ঝূর্ণিঝড় সৃষ্টির শুরু থেকেই সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে আম্ফানের সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে পায়রা।
সোমবার বিকেলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘আম্ফান আঘাত করার এখন যে লোকেশন আছে, সেটা হলো পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের যে সীমান্ত আছে সুন্দরবনের, সেটাকে সেন্টার ধরা হয়েছে। তবে এটা পরিবর্তন হতে পারে, যেহেতু এখনও সময় আছে’।
‘সেন্টার যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে আম্ফান যে স্পিডে আসছে, তাতে কম ক্ষতি হবে। ওই সেন্টার যদি সুন্দরবন ছাড়া পটুয়াখালী (বা অন্য স্থলভাগ) হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে’, যোগ করেন বজলুর রশিদ।
আজ রাত ৯টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আম্ফান সম্পর্কিত ২০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, ‘এটি আজ (১৮ মে) রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল’।
তাতে আরও বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকেল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
আম্ফান গত ৩ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বাংলাদেশের দিকে এগিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় আম্ফান পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দূরে এবং রাত ৯টায় ৯১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



