আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে ব্রিটিশ আদালত তার তীব্র সমালোচনা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বুধবার পার্লামেন্ট বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, জাতীয় এই বিতর্কের সময় রাজনৈতিক প্রশ্নে এমন রায় দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের ভুল হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বরিসের পার্লামেন্ট স্থগিতের আদেশকে বেআইনি ঘোষণা করে ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের ১১ বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে এ রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার আগে পার্লামেন্ট স্থগিত করার প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশকে আদালত বেআইনি বলে ঘোষণা করার একদিন পরেই শুরু হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে অধিবেশন শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রায় ঘোষণার সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪ তম অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন বরিস জনসন। রায় দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকেই ছুটে যান সংসদে।
হাউস অব কমন্সে বক্তব্য রাখার সময় আদালতের সমালোচনা করে বলেন, তিনি আদালতের এই রায়কে সম্মান করেন। তবে দেশের ‘রাজনৈতিক প্রশ্নে’ আদালতের এই রায় সঠিক ছিলো না।
হাউস অব কমন্সে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই পার্লামেন্টর বাইরের লোকজন বুঝতে পারছে এখানে কী হচ্ছে।’
এসময় তিনি বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘নিছক স্বার্থপরতা এবং রাজনৈতিক কাপুরুষতার কারণে তারা একপাশে সরে যেতে চায় না এবং জনগণের বক্তব্য রাখতে দেয়। বিরোধী দলীয় নেতা এবং তার দলের আসলে জনগণের উপর আস্থা নেই। তাদের কাছে আসল বিষয় হচ্ছে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত গণভোটের ফলাফল প্রত্যাহার করার একটি আবেগপ্রবণ ইচ্ছা।’
তিনি আরো বলেন, আজ যদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তাহলে আমরা আগামীকালই নির্বাচনে যাব। আর কোনো ছোট দল যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে আমরা তাদের ভোটের জন্য সময় দিব।
তবে আদালতের সমালোচনা করায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের তীব্র নিন্দা করেছেন লেবার পার্টির নেতা জিম করবি। তিনি বলেন, ‘তিনি একজন বিপজ্জনক প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজেকে আইনের উর্ধ্বে মনে করেন। কিন্তু এই পদে থেকে তিনি এভাবে আদালতের সমালোচনা করতে পারেন না।’
লেবার দলের আরেক নেতা পাউলা শেরিফ বলেন, ‘আমি জানি প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন শক্তিশালী মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করতে চান। তবে এই মুহূর্তে তিনি দেশের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী যে কাজটা করতে পারেন তা হলো, কিছুটা নম্রতা দেখানো আর কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা।’
প্রসঙ্গত, ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন বিরোধী দল এবং নিজের দলেরই বেশ কয়েকজন এমপিরা। এমনকি সম্প্রতি তার আনীত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট ২০ এমপিকে তিনি বরখাস্ত করেছেন।
সূত্র: বিবিসি/গার্ডিয়ান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।