
জুমবাংলা ডেস্ক : বৃহস্পতিবার রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় সুমাইয়া আক্তারের বাসায় আনন্দটা একটু বেশিই ছিল। নববিবাহিত বড় বোনের স্বামী এসেছেন বেড়াতে। মধ্যরাত পর্যন্ত সেই আনন্দে সময় কেটেছে সবার। এরপর এলো এক বিভীষিকার ভোর। ভবনে লাগা আগুনে চতুর্থ তলায় সুমাইয়াদের ফ্ল্যাটটি ধোঁয়াচ্ছন্ন হলো। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন পরিবারের দগ্ধ ছয় সদস্যকে উদ্ধার করলেন, তখন সুমাইয়া মারা গেছেন।
২১ বছর বয়সী সুমাইয়া রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। আরমানিটোলার আরমানিয়ান স্ট্রিটের আটতলা ভবন ‘হাজী মুসা ম্যানশনে’ পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। শুক্রবার তার মরদেহ যখন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের হিমঘরে পড়ে ছিল, তখন পরিবারের অপর পাঁচ সদস্য পোড়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। পরিবারের আদরের ছোট মেয়ের এমন চিরবিদায়ে কাঁদতেও পারেননি কেউ। এমনকি সুমাইয়া যে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে, তা জানানোও হয়নি পরিবারের দগ্ধ সদস্যদের।
শুক্রবার ভোরে আরমানিটোলার ওই ভবনে লাগা আগুনে সুমাইয়ার ব্যবসায়ী বাবা ইব্রাহীম সরকার, মা সুফিয়া বেগম, বড় বোন ইসরাত জাহান মুনা, মুনার স্বামী আশিকুজ্জামান খান আর একমাত্র ভাই জুনায়েদ সরকার দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে নবদম্পতি মুনা-আশিক আইসিউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
সুমাইয়ার মামা খালিদ বিন আহসান জুয়েল কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, সুমাইয়া পড়ালেখা শেষ করে বিদেশ গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। এক আগুনে সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। পুরো পরিবারটিই এখন মৃত্যুর পথযাত্রী।
জুয়েল বলেন, মাসখানেক আগে মুনা ও আশিকুজ্জামানের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে আশিকও এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মুনা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে স্থানীয় আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। তার স্বামী বুয়েট থেকে পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের একমাত্র ছেলে জুনায়েদ উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র।
সুমাইয়ার অপর একজন স্বজন গোলাম কবীর বলেন, বাবুবাজারে সরকার ট্রেডার্স নামে সুমাইয়ার বাবার চালের আড়ত রয়েছে। বড় মেয়ে ওই এলাকায় শিক্ষকতা করে। সুমাইয়ার কলেজও কাছাকাছি এলাকায়। এ জন্যই তারা ওই বাসাটিতে থাকছিলেন। এটি যে মৃত্যুকূপ হবে, তা চিন্তাও করতে পারেননি তারা। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবারই সুমাইয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের কেউ সুমাইয়ার মৃত্যুর খবর জানতেন না। কিছুটা সুস্থ থাকা বাবা ইব্রাহীম সরকারকে কেবল নিষ্ঠুর এ খবর জানানো হয়েছে।
এমন খবরে ময়মনসিংহ থেকে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন আশিকুজ্জামানের বাবা আবুল কাশেম খান। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, এক মাস আগে ছেলের বিয়ে হয়েছে। ঢাকায় খালার বাসায় থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতেই শ্বশুরের বাসায় এসেছিল বেড়াতে। এমন পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না কেউ।
ফায়ার সার্ভিসের সদরঘাট স্টেশনের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, প্রচণ্ড ধোঁয়ায় সুমাইয়া মারা গেছেন। পরিবারটির অপর সদস্যদেরও ধোঁয়ায় শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভবনটির সাততলা থেকে অলিউল্লাহ (৭০) ও কবিরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অলিউল্লাহর একজন স্বজন জাকির হোসেন বলেন, অলিউল্লাহ ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। একই ঘটনায় নিহত রাসেল বাড়ির মালিকের দোকান দেখাশোনা করতেন। রাসেলের আপন বড় মামা অলিউল্লাহ। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। অলিউল্লাহর সঙ্গে উদ্ধার হওয়া নিহত কবির হোসেন বাবুবাজারে একটি কাগজের মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। তিনি ওই ভবনটিতে অলিউল্লাহর সঙ্গে থাকতেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



