আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিশরের সুয়েজ খালের তীরের বালিতে আটকে পড়া এভার গিভেন নামে বিশালাকৃতির মালবাহী জাহাজটিকে সোমবার মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে খালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে ৪০০ মিটার লম্বা এবং দুই লাখ টন ওজনের দানবাকৃতির এই জাহাজটিকে পানিতে ভাসানো গেলেও সুয়েজ খাল দিয়ে স্বাভাবিক জাহজ চলাচল কখন পুরোপুরি শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়।
সুয়েজ খাল হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ততম পথগুলোর একটি। সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করে বিশ্ববাণিজ্যে।
মঙ্গলবার জাপানি মালিকানাধীন এই জাহাজটি প্রায় ২০,০০০ কন্টেইনার সহ বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি অতিক্রম করার সময় বালিতে আটকে যায়। জাহাজটির মাথা খালের তীরে আটকে সেটি আড়াআড়ি হয়ে পড়লে খালে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে খালের দুই দিকে সাগরে আটকা পড়ে কয়েকশ জাহাজ। অনেক জাহাজ জটে আটকা না থেকে দীর্ঘ পথে অন্য রুটে রওয়ানা হয়েছে।
কেন বিরল এই বিপত্তি ঘটলো তা এখনও পরিষ্কার নয়। সম্ভাব্য কারণ হিসাবে ঝড়ো বাতাসের কথা বলা হচ্ছে। এমন কথাও বলা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে জাহাজে হঠাৎ করে ঘটা বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
মিশরের কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, সোমবারের (২৯ মার্চ) মধ্যে এভার গিভেন চলতে সক্ষম হবে এবং পরপরই সুয়েজ খাল আবার সচল হবে।
জাহাজ পরিবহন সম্পর্কিত সাময়িকী লয়েডস লিস্টের ম্যানেজিং এডিটর রিচার্ড মিড বিবিসিকে বলেছেন, সোমবার দিনের শেষভাগে সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
সাগরে জাহাজের জট এবং লোকসানের খতিয়ান
কিন্তু গত সাতদিনে মিশরের তো বটেই পুরো বিশ্ব বাণিজ্যের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। এখনও বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ এই খালের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টন জ্বালানি তেল এবং বিশ্বের মোট তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস এই খাল দিয়ে পার হয়।
রবিবার পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে, ৩৬৯টি মালবাহী জাহাজ ১২০ মাইল লম্বা খালের দুদিকে সাগরে আটকা পড়েছে। সোমবার পাওয়া হিসাবে ৪৫০টির মত জাহাজ জটের মধ্যে পড়েছে এবং খাল চালু হলেও জট কাটাতে কয়েকদিন লেগে যাবে।
সুয়েজ খালের ওপর মিশরের অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে। করোনাভাইরাস প্যানডেমিকের আগে মিশরের জিডিপির প্রায় দুই শতাংশ আসতো সুয়েজ খাল থেকে পাওয়া মাশুল থেকে।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা রাবি শনিবার বলেন, খাল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন তাদের গড়ে ১৫ মিলিয়ন (এক কোটি ৫০ লাখ) ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
অন্যদিকে লয়েডস লিস্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, শত শত মাল ভর্তি জাহাজ আটকে থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে রয়েছে। তার অর্থ প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কোটি ডলার এবং ৩৩ কোটি টন পণ্যের ব্যবসা আটকে রয়েছে।
জার্মান বীমা কোম্পানি অ্যাল্যায়াঞ্জ শুক্রবার হিসাব দিয়েছে সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে থাকায় এক সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্যে ৬০০ কোটি ডলার থেকে ১০০০ কোটি ডলারের লোকসান হবে। যার ফলে, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ০.২ থেকে ০.৪ শতাংশ কম হতে পারে।
জাহাজ পরিবহন খাতে শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এসিএম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকাকে জানিয়েছে, এই জটের কারণে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে মাল পরিবহণের জন্য কিছু জাহাজের ভাড়া হঠাৎ ৪৭ শতাংশ বেড়ে গেছে।
সুয়েজ খালের জটের মধ্যে বসে না থেকে কিছু কিছু জাহাজ দীর্ঘ পথে রওয়ানা হচ্ছে, ফলে গন্তব্যে পৌঁছুতে তাদের অতিরিক্ত আট দিন লাগবে।
ক্ষতির মুখে অসংখ্য ব্যবসা
সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে পড়ায় শুধু যে মিশরের অর্থনীতি বা জাহাজ পরিবহন ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। বহু দেশে অভ্যন্তরীণ পরিবহন, সুপারমার্কেটের মত খুচরা ব্যবসা বা পণ্য উৎপাদনকারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়েছে।
ব্রিটেনের অনেক প্রতিষ্ঠানও তাদের অর্ডার করা পণ্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে বলেছে, আরও দেরি হলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে বিমানে করে অতিরিক্ত পণ্য আনতে হবে, যার পরিবহণ খরচ পড়বে কমপক্ষে তিন গুন।
বিশ্বের বহু ব্যবসায়ী তাই গভীর আগ্রহে অপেক্ষ করছেন কখন এভার গিভেন সুয়েজ খালের বালি থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও চলতে শুরু করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।