জুমবাংলা ডেস্ক: কখনো কখনো ছোট একটি ঘটনাও মানুষের জন্য উপদেশের অনেক বড় বার্তা নিয়ে আসে। আমার ব্যস্ততা কিংবা অলসতার দরুন বায়্যেনাত (মাসিক পত্রিকা) তৈরি হয়ে প্রেসে যেতে সবসময় দেরি হয়ে যায়। যিলকদ সংখ্যাটি প্রেসে গিয়েছে যিলকদের প্রথম দিকে। তাই এবার সঙ্গীদের বলেছিলাম, যিলহজ্ব সংখ্যাটিও যেন একসাথে আট-দশ দিনের মধ্যেই তৈরি করে ফেলা হয়। এ সময় অন্য সকল ব্যস্ততা বন্ধ। বিলম্বের এ ধারা যেন এখানেই শেষ হয়।
এটা সম্ভবত ২ যিলকদ বৃহস্পতিবারের ঘটনা। ৩ যিলকদ জুমার দিন গোসল করার সময় ডান কানের নিচে সামান্য ব্যাথা অনুভূত হল। পিঁপড়ার কামড়ের মতো। চিন্তার দূরতম সীমায়ও একথা আসেনি যে, এটা কোনো কঠিন অসুস্থতার পূর্বাভাস। জুমা পড়া হল। জুমার পর অভ্যাস অনুযায়ী খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ কাইলুলাহ। আসরের পূর্বে শরীরের তাপ একটু একটু বাড়তে থাকে। সাথে অবসাদ আর ক্লান্তি। বাদ আসর জিকিরের মজলিসে আর শরিক হতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু অলসতাকে প্রশ্রয় দিলাম না। অযু করে অভ্যাস অনুযায়ী জিকিরের মজলিসে শরিক হওয়ার জন্য মাদরাসায় চলে গেলাম।
সেখান থেকে মাগরিবের পূর্বে গেলাম আল ইখওয়ান মসজিদে। (জুমার দিন বাদ মাগরিব সেখানে দরসে কুরআন হয়।) দরস শেষ করে গাড়ীতে পৌঁছার আগেই শরীরে প্রচণ্ড কাঁপুনি শুরু হল। খুব কষ্টে বাসায় এলাম। শরীর কাঁপার সাথে শুরু হল প্রচণ্ড জ্বর। কানের নিচে যেখানে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিল সে জায়গাটা ফুলে গেল। ফোলাভাব ২/৩ দিনের মধ্যে ছড়িয়ে গেল সমস্ত ঘাড়ে। কানে বড় বড় ফোড়া দেখা দিল। পানি পড়তে লাগল সেখান থেকে। এমন জ্বালা হচ্ছিল যে, কোনো দিকেই পাশ ফিরতে পারছিলাম না। জ্বর ছিল একশ চার-পাঁচ ডিগ্রি। মনে হচ্ছিল গরম চুলায় জ্বলছি। অস্থিরতা ও অশান্তির কোনো শেষ ছিল না।
ডাক্তার জ্বরের ঔষধ দিল। তাতে এ পরিমাণ ঘাম হচ্ছিল যে, দৈনিক তিন-চারবার ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মোছা হত। এরপরও জ্বরের তীব্রতা কমত না। অনবরত কয়েক রাত এক ফোটাও ঘুম হয়নি। পনের দিন এভাবেই বিছানায় পড়ে রইলাম। রোগের কারণে একদম দুর্বল হয়ে গেলাম। আল্লাহ তাআলার লাখো শুকরিয়া তিনি নিজ দয়া ও অনুগ্রহে পুনরায় সুস্থতা দান করেছেন। আমি যেন নবজীবন লাভ করেছি।
বাহ্যিকভাবে এটা খুব সামান্য একটি ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটছে। আলোচনা করার মত গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয় না। কারণ উদ্ঘাটন কিংবা এ থেকে কোনো ফলাফল বের করার প্রয়োজনীয়তাও হয়তো মনে হবে না অনেকের কাছে। কিন্তু এই সামান্য ঘটনাটি অসামান্য উপদেশের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছিল আমার জন্য। শারীরিকভাবে যেমন প্রভাবিত হয়েছিলাম তেমনি চিন্তা-চেতনায় এবং মন-মস্তিষ্কে গভীর রেখা অংকন করেছিল ঘটনাটি। পাঠকের সামনে সেই অনুভূতিগুলো কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
* * *
সুস্থতা আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النّاسِ: الصّحّةُ وَالْفَرَاغُ.
দুটি নিআমতের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে : ১. সুস্থতা ২. অবসর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪২২
অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকার অর্থ হল, প্রথমত এই দুই নিআমত সাধারণত একসাথে লাভ হয় না। অনেক মানুষ সুস্থ, কিন্তু তার অবসর নেই। আবার অনেকে অবসর, কিন্তু সুস্থ নয়। আর কারো ভাগ্যে যদি উভয় নিআমতই একসাথে মিলে যায় তবে এর প্রকৃত মূল্যায়ন খুব কম মানুষই করে থাকে; বরং অযথা কাজকর্মে এ দুই নিআমত নষ্ট হয়ে যায়।
অসুস্থতাও আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। বিভিন্ন হাদীসে রোগ-শোক ও বালা-মসিবতেরও তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থতা দেহের যাকাত স্বরূপ। এর দ্বারা শরীর গুনাহমুক্ত হয়, পাক-পবিত্র হয়। আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বুলন্দ হয়। ভবিষ্যত জীবনের জন্য উপদেশ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
অনুবাদে : শাহাদাত ছাকিব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।