আজ পেটে ব্যথা, তো কাল হাঁটুতে ব্যথা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকে। কী থেকে সমস্যা হচ্ছে, তা জানা বা বোঝার চেষ্টা খুব কম জনই করেন। বেশির ভাগেরই অভ্যাস হল, অসুস্থ হলেই নিজে থেকে দেখেশুনে ওষুধ খেয়ে ফেলা। অথবা চিকিৎসক আগে যে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, সেগুলোই আবার কিনে খাওয়া। এতে শরীর তো সারেই না, উল্টো সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে দিনে দিনে।
এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। যে কোনো বয়সে একাধিক কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, কোনো অসুখ প্রতিরোধ করতে আগাম সাবধানতার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার, যাকে প্রিভেনটিভ মেজার বলা হয়। আপনি যদি মনে করেন একেবারে ৪০ বছর বা ৫০ বছরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। তত দিনে নানা জটিল অসুখ ডালপালা মেলতে পারে শরীরে। বছরে একবার রক্তে শর্করা, হিমোগ্লোবিন, টিএসএইচ, ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম, লিপিড প্রোফাইল টেস্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ইসিজি, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করাতেই হবে।
কোন বয়সে কী পরীক্ষা করাবেন?
২০ বছর বয়সের পর
১) রক্তচাপ ও কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি): রক্তাল্পতা, সংক্রমণ, হাইপারটেনশনের ঝুঁকি আছে কি না ধরা পড়বে।
২) ব্লাড সুগার টেস্ট: প্রি-ডায়াবেটিক কি না জানতে প্রয়োজন।৩) লিপিড প্রোফাইল: রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ও হার্টের স্বাস্থ্য জানতে জরুরি।
৪) থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট: টি৩, টি৪, টিএসএইচ পরীক্ষা করা হয়, থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে কি না তা ধরার জন্য।
৫) ভিটামিন ডি ও বি১২ টেস্ট: খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এখনকার ছেলেমেয়েরা অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত, তাই ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে কি না, তা জানা জরুরি।
৬) এসটিআই: বিভিন্ন সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (এসটিআই) নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে বৃহত্তর অংশই এখন অল্পবয়সি। কম বয়সে যৌন ভাবে সক্রিয় হওয়া, একাধিক সঙ্গী থাকা, সুরক্ষা ছাড়াই যৌনমিলন এবং সুরক্ষিত মিলন সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেই রোগ বাড়ছে। তাই এই পরীক্ষা করানো খুব জরুরি।
৩০ বছরের পরে
১) ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল টেস্ট: ত্রিশের পর থেকে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই এই দু’টি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি
২) ব্লাড প্রেশার: রক্তচাপ ওঠানামা করছে কি না, তা জানা জরুরি।
৩) লিভার ও কিডনি ফাংশন টেস্ট: ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে লিভার ফাংশন টেস্ট জরুরি। তাছাড়া আলট্রাসাউন্ড করা যেতে পারে। কিডনির জন্য কিডনি ফাংশং টেস্ট বা রেনাল ফাংশন টেস্ট করানো জরুরি। এ ছাড়া ইউরিনারি অ্যালবুমিন-ক্রিয়েটিনিন রেশিয়ো (ইউএসিআর) টেস্টও করাতে হবে।
৪০ বছরের পর
১) প্যাপ স্মিয়ার ও এইচপিভি টেস্ট: জরায়ুমুখের ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না, তা ধরা পড়বে।
২) ম্যামোগ্রাম: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নারীদের ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা এবং স্তনের এমআরআই স্ক্যান করিয়ে নেওয়া খুব জরুরি।
৩) চোখ ও দাঁতের পরীক্ষা: মায়োপিয়া, হাইপারোপিয়া এবং প্রেসবায়োপিয়া পরীক্ষা করানো উচিত। এই তিনটি পরীক্ষার মাধ্যমেই আপনার দৃষ্টিশক্তির মান কেমন, তা যাচাই করা হয়।
৪) হার্টের পরীক্ষা: ইসিজি, ট্রেডমিল টেস্ট, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, কোলেস্টেরল টেস্ট করাতেই হবে। নিয়মিত রক্তের সিরাম, লিপিড পরীক্ষা করাতে হবে। যদি কম বয়সে বাইপাস সার্জারি হয়ে থাকে, তাহলে আবার পরীক্ষা করানো দরকার। বাইপাস করালেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
৫) হরমোনাল টেস্ট: ত্রিশের পর থেকেই হরমোনের ওঠানামা শুরু হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হরমোনের কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখা জরুরি।
৬) বোন ডেনসিটি টেস্ট: হাড়ের স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চল্লিশের পর বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করাতেই হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।