সূরা কদর ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা পবিত্র কোরআনের ৯৭তম অধ্যায়। এই সূরাটি বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামক রাতের মাহাত্ম্য তুলে ধরে, যাকে বলা হয়েছে “হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।”
সংক্ষিপ্তভাবে সূরা কদরের গুরুত্ব:
🌙 লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য আলোর পথ।
Table of Contents
🕊️ এ রাতে ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল আ.) প্রতিপালকের নির্দেশে অবতীর্ণ হন।
🕌 এক রাতের ইবাদত, এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে গণ্য হয়।
💫 এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত।
🙏 এই সূরার মাধ্যমে আমাদের শেখানো হয় আল্লাহর রহমতের বিশালতা ও কদরের রাতের ফজিলত উপলব্ধির গুরুত্ব।
👉 সূরা কদর শুধু একটি সূরা নয়, বরং তা আমাদের ইবাদতের মান এবং জীবনের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেয়—আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সর্বোচ্চ সুযোগ এক রাতে অর্জন সম্ভব।
সূরা কদর: হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাতের ঘোষণা
রমজান মাসের শেষ দশ রাতের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রজনী হলো লাইলাতুল কদর—যেটিকে বলা হয়েছে “হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” এই রাতেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন নাজিল করেন, যা মানবজাতির জন্য এক অনন্য হিদায়াতের আলো।
সূরা কদর, যা কোরআনের ৯৭তম সূরা, মাত্র পাঁচ আয়াত হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অফুরন্ত রহমতের বার্তা নিয়ে এসেছে।
সূরা কদর: আরবি পাঠ, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
সূরা কদর (আরবি):
বাংলা উচ্চারণ:
১. ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কদর।
২. ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কদর।
৩. লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
৪. তানায্জালুল মালাইকাতু ওয়ার রুহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
৫. সালামুন হিয়া হাত্তা মতলাআল ফাজর।
বাংলা অর্থ:
১. নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) শবে কদরে নাজিল করেছি।
২. তুমি কী জানো শবে কদর কী?
৩. শবে কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
৪. সে রাতে ফেরেশতা ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে প্রত্যেক বিষয়ে অবতীর্ণ হন।
৫. এ রাতটি ফজরের উদয় পর্যন্ত শান্তিময়।
শানে নুজুল: এই সূরা কেন নাজিল হয়েছিল?
ইমাম ইবনে আবি হাতেমের বর্ণনায় রয়েছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সামনে বনী ইসরাঈলের এক মুজাহিদের কথা বলেন, যিনি এক হাজার মাস নিরবিচারে জিহাদ করতেন। সাহাবিরা তা শুনে বিস্মিত হন। তখনই সূরা কদর নাজিল হয়, যাতে জানানো হয়—এই উম্মতের একজন মুমিন যদি এক রাত শবে কদরে ইবাদত করে, তার ফজিলত ওই মুজাহিদের হাজার মাসের জিহাদের চেয়েও অধিক।
লাইলাতুল কদর ইবাদতের নিয়ম
শবে কদরের রাতে কী করবেন?
✅ নামাজ:
– নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই।
– দুই রাকাত করে যত খুশি পড়া যায়।
– মনোযোগ ও খুশু-খুজুর সাথে আদায় করুন।
✅ কোরআন তেলাওয়াত
– পছন্দের সূরা পড়ুন, অনুবাদসহ বুঝে পড়া উত্তম।
✅ দোয়া ও ইস্তিগফার
– বেশি বেশি “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলুন।
– রাসুল (সা.) শিখিয়েছেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন—আমাকে ক্ষমা করুন)।
✅ তওবা
– গুনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন।
লায়লাতুল শবে কদরের দোয়া আরবি-বাংলা: শবে কদরের রাতে পড়ার সর্বোত্তম দোয়া ও আমল
FAQ: শবে কদর ও সূরা কদর সম্পর্কিত প্রশ্ন
Q: শবে কদর ঠিক কবে হয়?
✅ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে খোঁজ করো। সবচেয়ে সম্ভাব্য রাত ২৭ রমজান।
Q: সূরা কদর কবে নাজিল হয়?
✅ রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে—নবী (সা.)-এর ওপর কোরআনের প্রথম ওহি এই রাতেই নাজিল হয়।
Q: সূরা কদর পড়ার ফজিলত কী?
✅ একবার পাঠে হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায় বলে হাদিসে ইঙ্গিত আছে।
সূরা কদর ও লাইলাতুল কদর—অপুর্ব এক নিয়ামত
সূরা কদর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—একটি রাত, যদি তা সঠিকভাবে কাটানো যায়, পুরো জীবন বদলে দিতে পারে। এই পবিত্র রাতে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে চাইতে হবে ক্ষমা, হেদায়েত এবং পরকালের সফলতা। আর সূরা কদর যেন হয় আমাদের নিত্য পাঠের অংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।