সৃষ্টিকর্তার কোনোকিছুই নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ করে মানুষ তার চিন্তা আর কর্ম দিয়ে

শায়লা কবির : সেক্স
কি চমকে গেলেন বুঝি..
যেন এটি একটি নিষিদ্ধ বিষয়..
যেন ছিঃ ছিঃ এই শব্দটি আমি কি করে লিখলাম..

না, মোটেও এটি একটি নিষিদ্ধ বিষয় নয়। এটা নিষিদ্ধ তখনই হয় যখন এটা সঠিক এবং সুস্থভাবে মানা না হয়। যখন এটা সঠিক সময়ে, সঠিক সম্পর্কের মাধ্যমে, সঠিক সঙ্গীর সাথে, সঠিক পদ্ধতিতে রক্ষা করা না হয়, তখন এটা করতে নিষেধ করা হয় এবং শুধু তখনই এটা নিষিদ্ধ, তা না হলে আর সব স্বাভাবিক কাজকর্মের মতো এটাও একটা স্বাভাবিক কাজ বা প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে সবাইকেই যেতে হয়। কেন আজ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি..

কয়েকবছর আগে আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে শোনা একটি ঘটনা আমি আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করবো। বান্ধবীর মুখ থেকে যা শুনেছি তা এখানে প্রায় হুবুহু তুলে ধরলাম।

“আমার দুই ছেলেমেয়েই তখন টিনএজার। ঘরের ঝুল পরিষ্কার করার সময় বেডের নিচে ঝাড়ু দিতে গিয়ে একটা দলামোচা করা কাগজ বেড়িয়ে এলো। কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে দেখি তাতে নারী-পুরুষের নানান ভঙ্গিমায় জড়িয়ে ধরা ছবির স্কেচ আঁকা। নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে চুমু দেওয়ার ভঙ্গিরও স্কেচ রয়েছে তাতে। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখিয়ে প্রথমে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, তারপর ছেলেকে, “কে এঁকেছে এটা?”দুজনেই অস্বীকার করলো এবং দুজনেই বল্ল, “আমি আঁকি নাই।”

অথচ আমি ছবিতে মানুষের মুখের আদল আঁকার ধরণ দেখে অনেকটাই আঁচ করতে পারছিলাম যে দু’জনের মধ্যে কার আঁকা হতে পারে এই স্কেচগুলি। আমারইতো বাচ্চা ওরা এবং ছোটবেলা থেকেই ওদের দু’জনেরই আঁকার হাত খুব ভালো। কার আঁকার ধরণ কেমন তা আমার খুব ভালো করেই জানা। সুতরাং ওরা দুজনেই অস্বীকার করলেও আমি ভালো করেই টের পেয়েছিলাম ছবিগুলো কে আঁকতে পারে, যদিও সেটা আমি প্রমাণও করতে যাইনি এবং পরে সেটা নিয়ে আর কথাও বাড়াইনি।

আমি শুধু খুব ভালো করে আঁকা ছবিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলাম এই জন্য যে, যে এঁকেছে সে এই ছবিগুলো কি মনে করে এঁকেছে বা তার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম ছবিগুলোর মধ্য দিয়ে। সেদিন টনক নড়লো আমার, ওরা বড় হচ্ছে। ধীরে ধীরে ওদের আরও বেশি বন্ধু হতে হবে আমার। আরও বেশি সহজ, স্বাভাবিক এবং ফ্রি হতে হবে ওদের সাথে। সেক্স নিয়ে বেশি নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ ভাব দেখালে আরও বেশি কৌতুহলী হয়ে উঠবে ওরা এবং মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি নিষিদ্ধ আকর্ষণবোধ থেকে হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে আরো বেশি সময় এবং মাথা নষ্ট করবে ওরা। এবং ওরা হয়তো এই বিষয়টির প্রতি কোনো ভ্রান্ত ধারণা থেকে বিভ্রান্ত হয়ে কোনো ভুলও করে ফেলতে পারে বৈকি। সুতরাং নিজেকে সচেতন ও সতর্ক করলাম এবং ছেলেমেয়েদের সাথে গল্পে বা আলাপে কখনো এই প্রসঙ্গে কোনো কথা উঠলে মা হিসেবে সীমা এবং মাত্রা বজায় রেখে যতটুকু সম্ভব বিষয়টি সম্পর্কে কিভাবে একটি স্বচ্ছ, সুস্থ এবং সুন্দর ধারণা দেওয়া যায় সেটা ভেবে নিয়ে ঠিক করে নিজের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে রাখলাম।”

বান্ধবীর বাস্তব জীবনের গল্পটি শুনে আমার মনে হলো, আসলে এক্ষেত্রে আপনার সাথে আপনার সন্তানের সম্পর্ক কেমন তার উপর নির্ভর কোরে আপনাকে খুব সচেতন এবং সতর্কভাবে আপনার সন্তানদের সাথে কথা বলতে হবে এবং কখন, কিভাবে বা কি ভাষায় অথবা কি কথা বলে বোঝালে আপনার আলোচনা বা বোঝানো থেকে ভুল না বুঝে বা মনের মধ্যে কোনো ভুল ধারণা পোষণ না করে আপনার সন্তান বিষয়টি সম্পর্কে একটি সঠিক, সুস্থ এবং স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবে সেটি আপনাকেই বুঝে শুনে ঠিক করে নিতে হবে।

আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থার জন্য আমাদের টিনএইজ ছেলেমেয়েদের সাথে সেক্স বা সেক্সুয়াল রিলেশনশীপ বিষয়টি সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণাগুলোকে স্বচ্ছ করে দেওয়ার জন্য সুস্থ আলোচনা এবং এর ভালো মন্দ দিকগুলো নিয়ে পরিষ্কার করে কথা বলাটাকে যেন ভীষণ লজ্জার এবং অনেকটা যেন বিরাট অপরাধ বলে মনে করা হয়।

কেন!?

আমি মা হয়ে সন্তানকে পৃথিবীর সব বিষয়ে ভালো-মন্দ জ্ঞান দিতে পারবো আর এই বিষয়টি যেন একটি নিষিদ্ধ বিষয়, এটা নিয়ে কথা বল্লে পাপ হয়ে যাবে! কে বলেছে এটা, কোথায় লেখা আছে যে এই বিষয়টি নিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলা বা জানাটা পাপ?সেক্স প্রাকৃতিক এবং অতি স্বাভাবিক একটি বিষয়। এটি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সুতরাং এটা নিষিদ্ধ কেন হবে যে এটা নিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক আলোচনা করা যাবে না।

আসলে সৃষ্টিকর্তার কোনোকিছুই নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ করে তোলে মানুষ তার নিষিদ্ধ চিন্তা আর কর্ম দিয়ে। মানুষই সৃষ্টিকর্তার মঙ্গলময় এবং সুন্দর সৃষ্টিগুলোকে কুৎসিত করে তোলে তার কুৎসিত এবং বিকৃত চিন্তাভাবনা দিয়ে।

আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা মন ও শরীরের যে মিলিত ভালবাসা থেকে সৃষ্টি করেছেন তা কি করে কুৎসিত হতে পারে। বরং আমরা মানুষরাই আমাদের বিকৃত কামনা, বাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এই সেক্স নামক বিষয়টিকে নোংরামীর পর্যায়ে নিয়ে যাই যা একসময় নিষিদ্ধ হয়ে ওঠে এবং সেই মানুষরাই একদিন নিমজ্জিত হয় পঙ্কিলতায়।

সুতরাং মা এবং বাবারা আসুন আমরা আমাদের টিনএইজ ছেলেমেয়েদের good parenting এর ক্ষেত্রে এই সেক্স বিষয়টি নিয়ে কড়াকড়ি এবং নিষিদ্ধ মনোভাব পোষণ না করে এবং ওদের মনে ভয় ঢুকিয়ে না দিয়ে ওদেরকে বিষয়টি প্রকৃতির অন্য আর সব স্বাভাবিক বিষয়ের মতোই স্বাভাবিকভাবে নিতে সাহায্য করি। প্রয়োজনে স্বচ্ছ, সুন্দর এবং সুস্থ একটি ধারণার বীজ বুনে দেই ওদের কচি মনের জমিতে।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ওরাই সুতরাং আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে কোনোরকম অন্ধকার ধারণা বা নিষিদ্ধ কৌতুহলের মধ্যে না রেখে সুস্থ ধ্যানধারণার আলোকে আলোকিত করে তুলি এবং ওদেরকে সবরকম ক্ষতিকর নিষিদ্ধ আকর্ষণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে মা-বাবা হিসেবে সবসময় সব পরিস্থিতিতে ওদের পাশে থাকি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *