জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা পুরো বর্ণনা করেছে অভিযুক্ত প্রেমিক ফারদিন ইফতেখার দিহান। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে ঘটনা নিয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় জবানবন্দি দেয় দিহান। জবানবন্দি অনুযায়ী, ধর্ষণের সঙ্গে একমাত্র দিহানই জড়িত। বাসা খালি থাকার সুবাদে শিক্ষার্থী আনুশকাহকে ফোনে ডাকে সে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ওই শিক্ষার্থী কলাবাগানের লেক সার্কাসের ৬৩/৪, পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টের দোতালার ডি-২ ফ্ল্যাটে আসে।
ফ্ল্যাটের মালিক দিহানের বাবা আব্দুর রউফ সরকার ২০১২ সালে জেলা রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। রাজশাহীর দুর্গাপুরে তার বড় ছেলের বাড়ি রয়েছে। সেখানে রয়েছে মাছের খামারও। করোনার মধ্যে আব্দুর রউফ সরকার তার বড় ছেলের বাড়িতে চলে যান।
অপরদিকে, দিহানের মেজ ভাই নারায়ণগঞ্জে যমুনা ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনিও বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ চলে যান। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দিহানের মা সানজিদা সরকার তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
মূলত বাসায় কেউ না থাকায় ওই শিক্ষার্থীকে ফোন করে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে বাসায় আসতে বলে দিহান। বেলা ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তাদের বাসায় এলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথন হয়। এক পর্যায়ে দিহান ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে। এরপর ওই শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে দিহান ভয় পেয়ে যায়। প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট ধরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার চেষ্টা করে দিহান-অনুশকাহ। তবে এক পর্যায়ে আনুশকাহ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন দিহান বাসার নিচে গিয়ে গাড়ি পার্কিং থেকে নিজের গাড়িটি বের করে। পরে দোতালা থেকে ভুক্তভোগীকে ধরাধরি করে নামিয়ে এনে গাড়িতে তুলে মডার্ন আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, ওই শিক্ষার্থী আগেই মারা গেছে।
এতে বন্ধু হুমায়িদ মিল্কি, আলভী মাহবুবসহ তিনজনকে ফোন করে হাসপাতালে আসতে বলে দিহান। এরপরই পুলিশ তাকে আটক করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যায়।
জবানবন্দিতে দিহান আরো জানায়, ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইডেক্সেল-এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে দিহান। আনুশকাহকে বহন করে নেয়া টয়োটা এক্সিও মডেলে গাড়ি দিহানের বাবা তাকে ২০১৯ সালে কিনে দেন। এর আগে তাকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেল কিনে দেয়া হয়েছিল। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও গাড়িটি দিহান নিজেই চালাত। আনুশকা ছাড়াও আরেক ছাত্রীর সঙ্গে দিহানের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
জবানবন্দিতে দিহান জানায়, আনুশকাহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার পরিকল্পনা থেকে বৃহস্পতিবার তাকে বাসায় আসতে ফোন করা হয়। তবে ধর্ষণের ঘটনায় আনুশকাহ মারা যাবে-সেটি সে কল্পনা করতে পারেনি।
এর আগে ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছিলো, যোনি ও পায়ুপথে আঘাত এবং রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা গেছে। বিকৃত যৌনচারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে আনুশকার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২ টার দিকে ভিকটিমকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাসায় নিয়ে যায় আসামি। এরপর সে ফাঁকা বাসায় ভিকটিমকে একা পেয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় আসামির অমানবিক কার্যকলাপের কারণে ভিকটিমের যৌনাঙ্গ ফেটে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়। ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য তাকে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ু পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।