সম্প্রতি এক গবেষক দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে দ্বীপের সাগরতলে লুকায়িত অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করা হয়। সমুদ্রের তলদেশে তিন থেকে সাত মিটার গভীরতায় স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিংয়ের মাধ্যমে এসব ছবি তোলা হয়েছে। এ সমীক্ষায় গবেষক দল সাগরতলের বিভিন্ন শ্রেণির ১৩১ প্রজাতির প্রাণী ও ১৮ প্রজাতির উদ্ভিদের ছবি তোলে।
এর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক স্পঞ্জ, শক্ত প্রবাল, জোয়ানথিড প্রবাল, সমুদ্রচাবুক, সমুদ্রপাখা, সি-অ্যানিমোন, সি-ফার্ন, জেলি ফিশ, ফ্ল্যাট ওয়ার্ম, অক্টোপাস, সি-স্লাগ, শামুক, ঝিনুক, টিউব ওয়ার্ম, ফায়ার ওয়ার্ম, কাঁকড়া, লবস্টার, হারমিট কাঁকড়া, ফেদার স্টার, সমুদ্রতারা, সমুদ্রশসা, মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ, সামুদ্রিক শৈবালসহ আরও অনেক কিছু। এ তালিকা শেষ হওয়ার নয়। তাই এ নিয়ে আলোচনা করার চেয়ে বরং কিছু ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় প্রাণীর কথা বলা যাক।
প্রথমেই সামুদ্রিক স্পঞ্জের কথা বলি। এদের দেহ নরম ও মসৃণ। দেহপৃষ্ঠে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। পূর্ণবয়স্ক স্পঞ্জ বিভিন্ন আকার, রং ও আকৃতির হতে পারে। যেমন গাছের মতো ছড়ানো, পেয়ালা আকৃতির, গোলাকার অথবা নির্দিষ্ট কোনো আকৃতিবিহীন। এদের কোনো মুখ, পরিপাকতন্ত্র, সংবহনতন্ত্র, পায়ু বা পেশিকোষ নেই। পানি থেকে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য খাদ্যকণা গ্রহণ করে। মোটামুটি পরিচিত হলেও এই প্রাণীগুলো দারুণ বৈচিত্র্যময়।
এবারে বলি শক্ত বা পাথুরে প্রবালের কথা। সেন্ট মার্টিনের প্রবালপ্রাচীরের প্রধান গঠনকারী উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয় এদের। কারণ, এরা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের তৈরি অস্থি নিঃসরণ করে। একটি প্রবালখণ্ড মূলত ‘পলিপ’ নামে শত থেকে হাজারো ক্ষুদ্র একক প্রবালের কলোনি। সাধারণত প্রবালের অসাধারণ উজ্জ্বল রং আসে পলিপের ভেতর বাসকারী ‘জুজ্যান্থেলি’ নামের ক্ষুদ্র শৈবাল থেকে। জুজ্যান্থেলি রঞ্জক পদার্থ উৎপন্ন করে। এগুলো পলিপের স্বচ্ছ দেহের ভেতর দিয়ে দেখা যায়। তাই প্রবালকে অপূর্ব সুন্দর দেখায়। প্রবাল খুব ধীরে ধীরে বাড়ে। বছরে এরা গড়ে মাত্র ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়া প্রবালের আরও অনেক ধরন আছে। এ রকম দুটি ধরনের কথা বলব। এক, সমুদ্রচাবুক বা সি-হুইপ। এটি চাবুক প্রবাল নামেও পরিচিত। এরা লম্বা, সরু, চাবুকের মতো শাখাযুক্ত। পাথর, প্রবালপ্রাচীর বা অন্য কোনো শক্ত পৃষ্ঠের ওপর লেগে থাকে। চাবুক প্রবাল অনেকটা পাতাহীন সামুদ্রিক গাছের মতো দেখতে। প্রায়ই লাল, কমলা, হলুদ, বেগুনি বা সাদা রঙের হয়। এগুলো লম্বায় তিন ফুট পর্যন্ত হতে পারে। দ্বিতীয় যে ধরনের কথা বলব, তার নাম জোয়ানথিড প্রবাল বা সমুদ্রমাদুর। খুব ছোট ফুলের কার্পেট বা মাদুরের মতো দেখায় এদের। কয়েক বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ঘন কার্পেটের মতো তৈরি করতে পারে। এদের সাধারণত প্রবালপ্রাচীর, গভীর সমুদ্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সামুদ্রিক পরিবেশে পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।