এম আর মহসিন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: হঠাৎ বিকট শব্দে ধসে পড়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কোয়ার্টারের ছাদ। এ সময় ওই কোয়ার্টারে কেউ না থাকায় বড় ধরনের কোনও ক্ষতি না হলেও অন্যান্য কোয়ার্টারবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার (১৪) সন্ধ্যায় শহরের গাডপাড়া এলাকার পি ৮৫/সি ভবনের একটি ইউনিটে এ ঘটনা ঘটে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অতি বর্ষণের কারণে ছাদটি ধ্বসে পড়েছে।
সূত্র মতে, বৃটিশ আমলে গড়ে ওঠা প্রায় আড়াই হাজার কোয়ার্টার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এই শহরে। কর্তৃপক্ষ এগুলো পরিত্যক্ত (ড্যামেজ) ঘোষণা না করায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৈধ ও অবৈধরা বসবাস করছেন। আর দীর্ঘ দিন এ অবস্থা বিরাজ করলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ের ভু-সম্পত্তি ও পুর্ত বিভাগের সূত্র মতে, ১৮৬৫ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা পুর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ২৪৮৮টি কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য ৩১টি দ্বিতল, সাব-অর্ডিনেটদের (মধ্যম স্তরের কর্মকর্তা) ১৩৯টি বাংলো ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৭১১টি ও এক কক্ষ বিশিষ্ট ১৬০৭টি কোয়ার্টার রয়েছে। এ সকল কোয়ার্টারের মধ্যে বরাদ্দ নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন ৯৭৪জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে ১২৩৯টি কোয়ার্টারে রয়েছে অবৈধ দখলদার। আর বাকি ২৮৫টি কোয়ার্টারকে কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও সেগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বহিরাগতরা।
এদিকে কর্মকর্তাদের ৩১টি বাংলোর মধ্যে ১১টি, সাব অর্ডিনেটদের ১৩৯টির মধ্যে ৬০টি বাংলোতে মধ্যে বসবাস করছে বৈধ্য বরাদ্দ প্রাপ্তরা। অবশিষ্ট ১৮টি ও ২৪টি সাব অর্ডিনেটদের বাংলো পরিত্যক্ত পড়ে আছে। এ সবের মধ্যে কর্মকর্তাদের ২ টি , সাব অর্ডিনেটদের বাংলো মিলে ৩ টি পুর্ণাঙ্গ মেরামত ও ও ৯৪৭ টির মধ্যে অর্ধেক সংস্কার করা হয়েছে। আবার এর মধ্যে সাব অর্ডিনেটদের ৮টি ড্যামেজ বাংলোসহ কর্মচারিদের দ্বি-কক্ষ ও এক কক্ষ বিশিষ্ট ৯০৩ কোয়ার্টারে কর্মচারীরা বসবাস করলেও সেখান থেকে ২১৯টি ড্যামেজ কোয়ার্টার বহিরাাগতরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
সরজমিনে এ সকল কোয়াটার ঘুরে দেখা গেছে, দুটি অফিসার্স কোয়ার্টার বাদে সবগুলোতেই মানুষ বসবাস করছে। দেড় হাজার কোয়ার্টারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। কোয়ার্টারগুলোর ভিতরে মেঝে, দেয়াল ও ছাদের চুন সুড়কির গাঁথুনির প্লাস্টার প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে। ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। বাইরের দেয়ালে জন্ম নিয়েছে ছত্রাক ও বিভিন্ন গাছ-গাছালি। এভাবে কোয়ার্টারগুলো পরিণত হয়েছে পোকা-মাকড়ের আখড়ায়। এ নিয়ে খোদ রেল বিভাগের কর্মচারীরা আতংকে রয়েছেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে ভু-সম্পত্তি বিভাগের কর্মচারি দুলাল হোসেন জানান, আমি অফিসার্স কলোনীর ১৪২নং কোয়ার্টারে বসবাস করছি। সেখানে পোকা-মাকড়ের বসতি। বর্তমান অতি বৃষ্টিতে ছাদের চুয়ে পড়া পানিতে পুরো ঘরের আসবাবসহ সব কিছুই ভিজে নষ্ট হয়। চুন সুড়কির বড় টুকরো ধ্বসে পড়ছে।
একই অভিযোগ করেন গোলাহাট রেল কলোনি, সাহেব পাড়া, গাড পাড়া, মুন্সি পাড়া, রাইস মিল, নিচু কলোনি, ইসলামবাগ, রসুলপুর, নতুনবাবুপাড়া এলাকার সকল কোয়ার্টারবাসীরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ের পুর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ের বাংলো ও কোয়ার্টারগুলো দেড়শত বছর আগে নির্মিত হয়েছে। এসব কোয়ার্টার আয়ুষ্কাল বহু আগেই শেষ হয়েছে। তবে প্রতি ৩ বছর পরপর সংস্কার করে কিছু কোয়ার্টার বসবাস উপযোগী করা হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কোয়ার্টারে বহিরাগতরা বাস করছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রেলওয়ের কোয়ার্টার উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। আর অতি বর্ষণের কারণে এ ধরনের ভবন ধ্বসের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তাই বহিরাগতদের ড্যামেজ কোয়ার্টার ত্যাগ করা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।