এম আর মহসিন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: জনবল সংকট, জরাজীর্ণ অবকাঠামো আর উৎপাদন বন্ধের কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটি বেহাল দশায় পড়েছে। এর অভ্যন্তরে তিনটি উপ-কারখানার প্রায় দেড় শত কোটি টাকার মেশিনপত্র বিকল হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ১৮৬৫ সালে সৈয়দপুর শহরের উত্তরাংশে প্রায় ১১০ একর ভূমির উপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা স্থাপন করে ব্রিটিশরা। ট্রেন ও রেললাইনের সকল যন্ত্রাংশ এ কারখানায় তৈরি হয়। তবে রেলপথ ও এর ওপরে ছোট-বড় সেতু তৈরি ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় নাট-বোল্ট থেকে বৃহৎ যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য এর কারখানা সংলগ্ন ১৮ একর ভূমিতে পৃথকভাবে রেলওয়ে সেতু কারখানা স্থাপন করেন ইংরেজরা। এতে সেতু ময়দান ও সেতু কারখানার কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। সেতু কারখানায় মেশিন উপ-কারখানা (শপ), পয়েন্টস এ্যান্ড ক্রোসিং ও গাডার ইয়ার্ড নামে তিনটি কারখানায় প্রায় সাড়ে শত শ্রমিক কাজ করত। তবে এখন আর এ সকল উপকারখানায় কোন উৎপাদন কার্যক্রম হয় না।
এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, আগে কর্মচাঞ্চল্যে ভরে ছিল এ কারখানার সকল শপ। ১২৭ জন মঞ্জুরীকৃত পদে বর্তমান ২ জন অফিসে ও ১৮ জন শপের কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ফোরম্যান থাকলেও কয়েক মাস আগে তিনি অন্যত্র বদলি হন। আর অভিভাবক হিসেবে উপ রেলওয়ে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আহসান উদ্দিনকে অতিরিক্ত সহকারী সেতু প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে কোন কাজ নেই।
তারা আরও জানান, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও নিয়মিত অবসরের কারণে এ অফিস আগামি ২ বছরের মধ্যে তালাবদ্ধ হয়ে যাবে।
সেতু কারখানার অফিস সহকারি আশরাফ আলী জানান, এ কারখানার জনবল ও অন্যান্য সংকট বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ আমারও অবসরের সময় হয়েছে।
রবিবার (২৫ আগস্ট) সরজমিনে এ সেতু কারখানা ঘুরে দেখা যায়, পুরো কারখানা জুরে তিন ফুট উচু জঙ্গলের সবুজ চাঁদর। এর ওপর রাখা হয়েছে তিস্তা ও পাকশি হার্ডিঞ্জ সেতুর পরিত্যাক্ত লোহা-লক্কর। একটি বিকল ষ্টিম ক্রেন যা ঘাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। মেশিন শপের সাথে প্লাট ফরম শেড বা নকশা ঘর। এতে ৯ টি টুলবক্স, ইয়ার কমপ্রেসার তিনটি জরাজির্ণ অফিস ঘর। বিশাল উচ্চতার জির্ণ শেড অবকাঠামো। এর মেজেতে সারিবদ্ধ ৫টি বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার, ৩ টি ওয়েল্ডিং প্লান্ট,উইন্স ক্রাব, ডাইচ ৩টা, লেদ ২টি, বিদ্যুৎ চালিত বেল্ড ড্রাইভিং ৩ টা,প্লেট কাটিং বা শেয়ারিং ১টি, হেমার ২ টি, প্লেনিং ২টি । পয়েনন্টস এ্যান্ড ক্রোসিং শপে এক্সপাঞ্জ সুইস বা টাংরেল, ৬০ হর্সের বিদ্যুৎ সম্পন বেল্ড ড্রাইভ ২ টি। গাডার ইয়ার্ডে আসানো শেয়ারিং মেশিন, শেয়ারিং পাঞ্চ মেশিন, ১ ড্রিল মেশিন, উইন্স ক্রাব মেশিন যা পাইলিং কাজে ব্যবহার করা হয়, রাশিয়ান এয়ার কমপ্রেসার ও বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার। সব মিলে উৎপাদন শুন্যতায় প্রায় ৩৫ টি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে ১ টি হেমার মেশিন সচল করে অনেক সময় উৎপাদন কাজ করা হত। এ সকল মেশিনে মধ্যে ১ টি লেদ মেশিনের গায়ে দেখা যায় ১৯১৫ সালের তৈরি। বর্তমান এ সকল মেশিন অত্যন্ত ব্যায়বহুল যার মুল্য প্রায় দেড় শতাধিক কোটি টাকা।
একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন ২০১২ সালে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর রেল কারখানার ২৪ টি উপ-কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ করে। তবে সেতু কারখানা মেরামত করা হয়নি। এতে দির্ঘ দেড়শত বছরের কারখানার অবকাঠামোর বেহাল অবস্থা হয়েছে। বর্তমানে রেলপথের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ায় সেতু কারখানার কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর অব্যাহত চলতে থাকলে আগামি কয়েক বছরে এই কারখানার বিলুপ্ত ঘোষণা আসতে পারে।
জানতে চাইলে সেতু বারখানার অতিরিক্ত সহকারি প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন কোনও মতামত প্রদানে অনিহা প্রকাশ করেন।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.