জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সোনার বাজার বর্তমানে চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বিশ্ববাজারের প্রভাব, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সোনার দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে দেশে সোনার অলংকার বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে গেছে, এবং অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
সোনার বাজারের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে দেশের সোনার বাজারে ভালো মানের এক ভরি সোনার গহনার দাম ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এটি একটি রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সর্বশেষ ১৯ মার্চ সোনার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশ সোনা মজুত করছে, যা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে সোনার দাম ক্রমাগত বাড়ছে, এবং এটি সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ঈদের বাজারে সোনার বিক্রির ভয়াবহ পতন
ঈদুল ফিতর সাধারণত সোনার বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তবে এবছর পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। সাধারণত ঈদের সময় সোনার গহনার বিক্রি বেড়ে যায়, কিন্তু এবার তা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে ক্রেতার সংখ্যা অত্যন্ত কম। দোকানদাররা অলস সময় পার করছেন, এবং অনেক কর্মী চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। একটি ছোট্ট সোনার আংটির দাম ৪০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না, যা ক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে অনেকেই অলংকারের পরিবর্তে নগদ টাকা উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
সোনার দাম বৃদ্ধি ও এর কারণ
বিশ্ববাজারে সোনার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ, এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক দেশ তাদের মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সোনা মজুত করছে।
বিশ্ববাজারের চাহিদার কারণে সোনার দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ১ লাখ ৪ হাজার ৪৯৮ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ও মজুরি যোগ হলে ভালো মানের এক ভরি সোনার গহনার মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৯ টাকা।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ শঙ্কা
সোনার গহনার উচ্চমূল্যের কারণে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে রয়েছেন। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারের এই নিম্নমুখী প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে ঈদের পর অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, “গত বছর আমাদের যে বিক্রি ছিল এবছর তার ৩০ শতাংশও নেই। অর্থাৎ বিক্রি ৭০ শতাংশের ওপরে কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, এবং অনেকে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।”
সরকার ও নীতিনির্ধারকদের করণীয়
সোনার বাজারের এই সংকট মোকাবিলায় সরকার যদি ভ্যাট কমানোর মতো কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনে, তাহলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। আমদানি শুল্ক কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হলে দেশের সোনার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে।
সোনার বাজার বর্তমানে ভয়াবহ মন্দার মধ্যে রয়েছে। দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে ক্রেতারা অলংকার কেনার পরিবর্তে নগদ টাকা উপহার দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ফলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যদি সরকার উপযুক্ত নীতিগত পরিবর্তন না আনে, তবে ঈদের পর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।