সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: কিশোরদের নিরাপদ ব্যবহারে করণীয়

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারনে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। সার্জন জেনারেল ভিভেক মূর্তির রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কিশোর কিশোরী সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে। প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে স্ক্রোলিং, পোস্টিং বা অন্যভাবে জড়িত।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আমাদের শিশুদের ক্ষতিকর বিষয়বস্তুর সংস্পর্শে আসা এবং অত্যধিক ব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের শক্তিশালী নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে বয়সের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা। কোম্পানিগুলিকে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি শিথিল করা উচিত যা শিশুদের অনলাইনে থাকতে প্রলুদ্ধ করে এবং কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষার জন্য আরও ভাল সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে।

অত্যধিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মনোযোগ-ঘাটতি/হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডারের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হলো টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইন্সটিগ্রাম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার যাতে অল্প বয়সীদের জন্য ইতিবাচক হয় এবং তারা নিরাপদে অনলাইনের জগতে বিচরণ করতে পারে, সে জন্য সরকার, প্রযুক্তি কোম্পানি, শিক্ষক, মা-বাবা এবং অভিভাবকদের দায়িত্ব আছে।

অনলাইনে শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে, সে বিষয়ে তাদের জানানোর জন্য বাংলাদেশে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইনে সুরক্ষাবিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এই শিক্ষা পেলে অল্প বয়সীরা ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক পণ্য ও সেবা তৈরির সময় ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কিশোর-কিশোরীদের জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে, তা প্রতিরোধে এই কোম্পানিগুলি খুব একটা সক্রিয় নয়।

কারণ, তারা মূলত মুনাফা দ্বারা তাড়িত। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে।

মা-বাবা সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। এতে থাকবে অনলাইন এবং বাস্তব কার্যক্রমের মাঝে ভারসাম্য রাখা, প্রতিদিন সর্বোচ্চ কতটা সময় অনলাইনে কাটানো হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ব্যক্তিগত তথ্য পোস্ট না করার মতো বিষয়।

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইসমুক্ত থাকার চর্চা করা প্রয়োজন। পরিবারের সবাই মিলে খাবার সময় অথবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে কোনো ডিভাইস ব্যবহার না করা এবং নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলা সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই ভালো।

সিলিকন ভ্যালিতে প্রযুক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন অথবা এর নেতৃত্বে আছেন এমন অনেকে নিজের পরিবারে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করছেন। পরিবারের সদস্যরা বসার ঘরে যাওয়ার আগে নিজেদের ডিভাইসগুলো একটা ঝুড়িতে রেখে যান, যাতে পারিবারিক আলোচনার সময় কারও মনোযোগে ব্যাঘাত না ঘটে।

অনলাইনের কার্যক্রম বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। সন্তানদের সামাজিক এবং আবেগীয় দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলে মা-বাবা তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।