বিনোদন ডেস্ক : সৌন্দর্যের কি সংজ্ঞা আছে, এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে সৌন্দর্যের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া যায় না। মানুষের মধ্যে জাতি-বর্ণ, তাদের পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী আলাদা আলদা সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিয়ে থাকে। আর সে কারণেই সৌন্দর্য বোধটাও আপেক্ষিক।
সৌন্দর্যের ধারণা সময়ে সময়ে এবং স্থানে স্থানে পরিবর্তিত হয়, তাই এটি সর্বজনীন নয় । সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা ভিন্ন হয়। কিন্তু সৌন্দর্য নিজেই সর্বজনীন। তাই সভ্যতার শুরুতে সৌন্দর্যের যে সংজ্ঞা বা মান ছিলো সেটি আর এখন নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর শিল্প বিপ্লবের পথে ধরে বদলে গেছে সৌন্দর্যের ব্যাখাও।
দাগহীন ফর্সা রঙ ও হালকা গড়নকে নারীর সৌন্দর্য বলে ধরে নেওয়া হত একসময়। শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য রয়েছে শরীরের আদর্শ মাপ আর গায়ের আদর্শ রঙ হবে শাদা শুভ্র। চুল হবে দীঘল কালো কিংবা স্বর্ণালী। সৌন্দর্য আর ফ্যাশন চর্চার এমন সব স্টেরিওটাইপ সংজ্ঞাগুলো এখন বদলে যাচ্ছে।
নারীরা সৌন্দর্যের ধরাবাঁধা এমন ধারণাকে মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের শরীরের তথাকথিত খুঁতকেই ‘সৌন্দর্যের প্রতীক’ হিসেবে স্থাপন করছেন। লোকমুখের খুঁতকেই নিজের সৌন্দর্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত করেছেন এমন সব সুপারমডেলের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। ফলে সৌন্দর্যের ধরাবাঁধা সংজ্ঞা খুব বেমানান হয়ে পড়েছে।
আর এই পরিবর্তনে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নারী সৌন্দর্যের মানই বদলে দিতে শুরু করেছে এই মাধ্যম। চলতি হাওয়ার পন্থী হতে এখন আর নারীরা কোন বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল নন। কারণ, এখন একজন নারী সহজেই নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন সামাজিক মাধ্যমে।
এই মাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমেই নারী জেনে নিতে পারছেন তার আশপাশের প্রতিক্রিয়া। শত থেকে হাজারো লাইক আর কমেন্টের ভেতর থেকে নিজের সম্পর্কে অনেক বেশি মূল্যায়ন করে নিচ্ছেন। ফলে, ফ্রিকলস, প্লাস সাইজ, ঘন কোঁকড়া চুল, ফাঁকা দাঁত থেকে পেশীবহুল পা এখন আর কোন খুত নয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন ডিজাইন, টেকনোলজি এন্ড এডুকেশন জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বয়ং আমেরিকাতে নারীর গড় আকার ১৪ থেকে পরিবর্তন হয়ে ১৬ থেকে ১৮ সাইজের চলে এসেছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মার্কিন নারীর ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে এমন উপাত্ত উঠে এসেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, গড় কোমরের আকার গত দুই দশকে ৩৫ ইঞ্চি থেকে বেড়ে এখন দাঁড়িয়ে সাড়ে ৩৭ ইঞ্চিতে। ওই গবেষণা দলের প্রধান সুসান ডান জানিয়েছেন, গড় আকার একজন নারীর সৌন্দর্য ধারণা গড়ে উঠতে সহায়ত ভূমিকা রাখে। হালকা-পাতলা গড়নের দিন বোধহয় শেষ হয়ে আসছে।
তিনি জানান, নারীর গড় আকার শুধু আমেরিকাতেই নয়, গোটা বিশ্বেই বদলে যাচ্ছে। এর বড় প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাকখাতে। ডান বলেন, আমরা আশা করছি নারীর গড় আকার এবং সৌন্দর্য ধারণা বদলে যাওয়ার বিষয়টি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা দেখতে পারছেন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করছেন।
এই গবেষক বলেন, তাদের গবেষণায় এটা পরিস্কার হয়েছে যে, নারীর গড় আকার আপডেট করা প্রয়োজন। হবে। আগের প্রচলিত হালকা-পাতলা গড়নের ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর বিষয়টি যারা অনুধাবনে ব্যর্থ হবে, সেসব ব্রান্ডগুলো একটা সময় বাজার থেকে বিলীন হয়ে যাবে।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডান এবং তার সহ-লেখক ডেবোরা ক্রিস্টেল ফ্যাশন শিল্পকে মানিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তারা উপসংহারে পৌঁছেছে যে, গড় নারীর জন্য ডিজাইন করতে ব্যর্থ হওয়া ব্র্যান্ডগুলো পেছনে পড়ে যাবে, কারণ সৌন্দর্য সম্পকে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।