জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাদাসিধে কৃষক ছিলেন ছিদ্দিক ওরফে ছিদ্দু মিয়া। সাত-পাঁচে থাকতেন না। অন্যের জমিতে কাজ করে কোনোরকমে দিন চলে যেত তার ও পরিবারের। জেলা শহর ও গ্রামের আশপাশের দু’চারটা বাজার-এই ছিল তার পৃথিবী। ঢাকা শহরের নাম শুনেছেন বটে, দেখেননি কখনও।
সেই কৃষক ছিদ্দু মিয়া একদিন স্বপ্নে দেখেন, সে সময়ের তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আলী আকবরের সঙ্গে চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা হয়েছেন। জাহাজে করে হজে যাওয়ার উদ্দেশে তাদের এ যাত্রা। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই পৌঁছে গেলেন চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু এরপরই তাদের চোখ ছানাবড়া। কারণ তাদের ফেলে রেখেই চলে গেছে হজের জাহাজ। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন।
এটুকু দেখেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ছিদ্দু মিয়ার, ভাঙলো স্বপ্ন। সঙ্গী হয়ে রইলো হতাশা, আক্ষেপ। জীবনে কোনোদিন মক্কা-মদিনায় যাওয়া তো সম্ভব হবে না। এর চেয়ে আল্লাহ যদি স্বপ্নেই আমাকে কালো গেলাফের ‘কাবা’ আর সোনার মদিনার সবুজ গম্বুজের ‘রওজা’ দেখিয়ে দিতেন!
তার এই স্বপ্নের কথা এক কান দুই কান করে জানাজানি হয়ে গেল পুরো এলাকায়। একজন তার নাম দিয়ে দিল ‘ফিরতি হাজি!’ এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এর মধ্যে কেটে যায় বহু বছর।
১৯৯৪ সালে ছিদ্দু মিয়ার মাথায় চাপলো, কাজের জন্য সৌদি আরব যাবেন তিনি। বয়স ৫৪ হয়ে যাওয়ায় অনেকে তাকে বাধাও দিল। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে ভিটে-মাটি লিজ দিয়ে এবং কিছু ধারদেনা করে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ক্লিনার ভিসায় পাড়ি দিলেন আরব মুলুকে। চির আকাঙ্ক্ষিত মক্কা-মদিনার দেশ সৌদি আরবে।
ছিদ্দু মিয়া প্রথম এক বছর কাজ করলেন মক্কার একটি হাসপাতালে। এরপর বদলি হয়ে এলেন মসজিদে হারামের এক নম্বার গেট ‘বাব আব্দুল আজিজ’-এ। সেখানেই মোহাবিষ্টের মতো কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ একটি যুগ। এরমধ্যে সাতবার হজ করেছেন, ওমরাহ করলেন হিসাবছাড়া। সুযোগ পেলেই চলে যেতেন কাবার তাওয়াফে।
এভাবেই চলছিল সময়। একদিন সকালে নিজ দায়িত্ব পালনের সময় দেখেন, হারাম শরিফের এক কোনায় একজন লোক অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। আরও দুজনের সহযোগিতায় অজানা-অচেনা ওই লোককে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলেন তিনি। এক পর্যায়ে জানা যায়, তিনি বায়তুল্লাহ শরিফে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ অফিসার। গোপনে কর্মীদের নজরদারি করতে বের হয়ে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর বৃদ্ধ ছিদ্দু মিয়াকে কাছে ডেকে সেই অফিসার জানতে চাইলেন, কী প্রতিদান চাও। সরল ছিদ্দু মিয়ার সহজ জবাব, আল্লাহর জন্য করেছি। কোনো বিনিময় চাই না।
তারপরও ওই অফিসার জোরাজুরি করতে থাকলে ছিদ্দু মিয়া বলেন, কদিন ধরেই তো কাবা ঘরের ভেতর-বাইরে সংস্কার কাজ হচ্ছে। এই ফাঁকে যদি আপনি আমাকে কাবার ভেতর যাওয়ার একটা সুযোগ করে দিতেন, তাহলে জীবনভর আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।
অবাক হলেও ওই অফিসার বললেন, পরদিন বাদ এশা ৭৯ নাম্বার গেটে থাকবেন। আমি আপনাকে ভেতরে ঢুকানোর ব্যবস্থা করবো। কথামতো পরদিন ছিদ্দু মিয়া হাজির। অফিসার কোনো এক কৌশলে তাকে কাবা শরিফের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে সময় দিলেন আট মিনিট। দুই দিকে ফিরে চার রাকাত নামাজ পড়লেন ছিদ্দু মিয়া। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। এরপর বেরিয়ে আসেন দিগ্বীজয়ীর বেশে!
যে কাবা শরিফে প্রবেশের সৌভাগ্য অনেক দেশের রাজা-বাদশা-প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীরও হয় না, সেখানে প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ একজন কৃষক হয়ে সেই সৌভাগ্য লাভ সত্যই আশ্চর্যের বিষয়।
এক সময় দেশে ফিরে আসেন ছিদ্দু মিয়া। ২০১৭ সালে এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিটি মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।