প্রাচীনকালে মানুষ ভাবত পৃথিবীর অবস্থান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। তাঁদের কাছে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না। ছিল না পরীক্ষা-নিরীক্ষার বালাই। খালি চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে যা বোঝার বুঝত। তারপর নিজেদের মতো করে সে ধারণার পক্ষে যুক্তি সাজাত। কেউ কেউ আসলেই সত্যান্বেষণের চেষ্টা করেছে। অনেকে আবার যুক্তি মিলতে না চাইলেও মিলে-ঝিলে মিলিয়ে নিয়েছে। আজ আমরা জানি, তাদের সেসব চিন্তা ঠিক ছিল না।
গ্রিক জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ অ্যারিস্টার্কাস প্রথম বলেন, পৃথিবী নয়, সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। মধ্যযুগে ভারত ও আরবের বিজ্ঞানীরাও একই কথা বলেছেন। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তির মুখে সে ধারণা বেশি দূর এগোতে পারেনি। এরপর কোপার্নিকাস, গ্যালিলেওরা পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলকে নস্যাৎ করে দেন পরীক্ষালব্ধ প্রমাণের মাধ্যমে। গ্যালিলেও যুগের আগে শত শত বছর ধরে মানুষ এই ভুল ধারণা লালন করেছে।
আগে যেমন বলেছি, আজ আমরা জানি, সৌরজগতের কেন্দ্রে আছে সৌররাজ সূর্য। এই নক্ষত্রটির চারপাশে ঘুরছে পৃথিবীসহ ৮টি গ্রহ, শতশত বামন গ্রহ, ২০০-এর বেশি উপগ্রহ, হাজারো ধূমকেতু ও লাখো গ্রহাণু। এদের প্রত্যেকের আলাদা গল্প আছে। প্রতিটি গ্রহের পরিবেশ ভিন্ন, কেউ দানবীয়, কেউ পৃথিবীর চেয়ে অনেক ছোট। কেউ বা আবার শুধু গ্যাসে তৈরি, পৃথিবীর মতো নয় মোটেও। স্বয়ং সূর্যেরও আছে নানা দিক, নানা রহস্য। বুকের মাঝে তার আগুন জ্বলছে দাউ দাউ। সৌরপরিবারের সদস্যদের এরকম নানা জানা-অজানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে এই ধারাবাহিক লেখায়। তবে শুরুতে একনজরে দেখে নেওয়া যাক সৌরপরিবারের সদস্যদের।
সৌরজগতের শুরুটা হয়েছিল প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে। মহাকর্ষের প্রবল টানে ধুলোমেঘ এক জায়গায় জমা হয়ে সৃষ্টি হয় সূর্য। কিছু পঞ্জিভূত ধুলোর মেঘ মধ্যাকর্ষণের কারণে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে চাকতির মতো। সেই চাকতি থেকেই সৃষ্টি হয় সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলো। বিষয়টি এত সরল নয় অবশ্যই। শুরুতে যেমন বলেছি, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে ভিন্ন কোনো লেখায়।
আমাদের সৌরজগতের অবস্থান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। আরও স্পষ্ট করে বললে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরের কালপুরুষ বাহুতে অবস্থিত এটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের চারপাশে ১ হাজার ৫০০ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। সৌরজগতের বাইরের চারপাশে আছে ওর্ট ক্লাউড। এই গ্যালাক্সির মধ্যেই আছে এরকম আরও হাজারো নক্ষত্রব্যবস্থা। তবে আমরা শুধু আমাদের নিজস্ব নক্ষত্রব্যবস্থা—সৌরজগৎ নিয়েই এখানে আলোচনা করব।
প্রথমে বলা যাক সৌররাজ সূর্যের কথা। সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯ শতাংশই আসলে সূর্যের ভর। বাকি মাত্র ১ ভাগ হলো অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু—সব। সূর্যের গঠনের মূল উপাদান হাইড্রোজেন। এর চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ জুড়েই এই হাইড্রোজেন। এ ছাড়া অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে হিলিয়াম, সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন, লোহা, কার্বন ইত্যাদি।
সূর্যই সৌরজগতের মূল চালিকাশক্তি। সূর্যের আলোতেই আলোকিত হয় সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহগুলো। এই আলো না পেলে পৃথিবী ঢাকা পড়ে যেত অন্ধকারে। পৃথিবীতে জীবজগৎ বলতে কিচ্ছু থাকত না। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে আটটি গ্রহ। এরমধ্যে সূর্যের কাছের চারটি গ্রহ পাথুরে। দূরের চারটি গ্রহ মূলত গ্যাসীয়।
কাছের চারটি গ্রহ যথাক্রমে—বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের এবং ছোট গ্রহ। এর কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি আছে অক্সিজেন। এ ছাড়াও আছে সোডিয়াম, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও পটাশিয়াম। শুক্র গ্রহের আকার প্রায় পৃথিবীর সমান। সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহও এটি। এই গ্রহের প্রায় ৯৬ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড। এ ছাড়াও আছে নাইট্রোজেন, আর্গন ও হিলিয়াম।
সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবী। আমাদের গ্রহ। সৌরগ্রহদের মধ্যে এই নীল-সবুজ গ্রহটিই শুধু জীবন ধারনের উপযোগী। অন্যান্য গ্রহের তুলনায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও বিচিত্র। বায়ুণ্ডলের প্রায় ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন। এ ছাড়াও আছে অক্সিজেন, আর্গন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড। আর পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। আমাদের চাঁদমামা।
পাথুরে গ্রহের মধ্যে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে আছে মঙ্গল। লাল গ্রহ হিসেবে এটি বিখ্যাত। পৃথিবী ও শুক্র গ্রহ থেকে মঙ্গল আকারে ছোট। এর দুটি উপগ্রহ আছে। ফেবোস ও ডেমোস। ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরে বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে এটি। তা-ই এ গ্রহটি সম্পর্কে জানার জন্য বহু অভিযান চালিয়েছে মানুষ। মঙ্গলে নেমেছে অনেক নভোযান। নাসার আশা, ২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গলের মানুষের পা পড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।