সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ, শতাধিক উপগ্রহ, হাজার হাজার গ্রহাণু এবং কোটি কোটি ধুমকেতু। শান্তশিষ্ট সৌরজগতে কোনোভাবে ব্ল্যাকহোল ঢুকে পড়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু যদি ঢুকতে পারত, তবে কী হতো? অনাহূত কোনো ব্ল্যাকহোল কী শুষে নিত সৌরজগতকে?
ব্ল্যাকহোল নিজে কোনো গর্ত নয়। খুব ছোট্ট জায়গায় প্রচণ্ড ভর জমলে তা স্থানকালের চাদরে অনেকটা গর্তের মতো করে তীব্রভাবে বাঁকিয়ে ফেলে। আমরা বলি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এদের মহাকর্ষ শক্তি অনেক বেশি হয়। এতটাই বেশি যে একটা নির্দিষ্ট এলাকা পার হলে কোনো কিছুই আর এ আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। মিশে যায় কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে।
মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের কমতি নেই। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যেমন অতিভারী ব্ল্যাকহোল বসে আছে, তেমনি প্রতিনিয়ত নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয় নাক্ষত্রিক ব্ল্যাকহোল বা স্টেলার ব্ল্যাকহোল। সব ব্ল্যাকহোল যে এক জায়গায় স্থির থাকে, এমন নয়। জ্বালানী সংগ্রহ করতে স্থান পরিবর্তন করতে পারে। ধরা যাক, এমনই কোনো ব্ল্যাকহোল ঢুকে পড়লো সৌরজগতে। সেক্ষেত্রে ঘটনাগুলো কেমন হতো?
ব্ল্যকহোলের কারণে পুরো সৌরজগতের অস্তিত্ব সংকটে পড়তো কিনা, তা নির্ভর করে ব্ল্যাকহোলটি কতো বড় আর সৌরজগতের কত কাছে চলে এসেছে তার ওপর। আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে আছে একটি অতিভারী ব্ল্যাকহোল। নাম স্যাজিটেরিয়াস এ*। সূর্যের তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ গুণ ভারী এ ব্লাকহোলটি। এতো ভারি আর বড় ব্ল্যাকহোলের সামনে সৌরজগতে টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
শুধু তাই নয়, আকারের কারণে ব্ল্যাকহোলটি কয়েক আলোকবর্ষ দূর থাকলেও আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যাযাবর ব্ল্যাকহোলের চারপাশে থাকত প্রচুর গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র আর উল্কা। আসার পথে এসব ব্ল্যাকহোলের সঙ্গী হতো। ব্ল্যাকহোলের জ্বালানী হিসেবে ঘুরতে থাকা এসবই হতো উত্তপ্ত। কয়েক আলোকবর্ষ দূরে থাকতে উত্তপ্ত এসব মহাজাগতিক বস্তুর বৃষ্টি শুরু হতো সৌরজগতে। হয়তো মৃত কোনো গ্রহের আঘাতে ততক্ষণে পৃথিবীর লীলা সাঙ্গ হয়ে যেত। অর্থাৎ অতিভারী ব্ল্যাকহোল অনেক দূরে থাকলেও এর প্রভাবে পৃথিবীসহ গোটা সৌরজগত ধ্বংস হওয়ার শঙ্কাই বেশি।
এখন ব্ল্যাকহোলটি যদি ছোট হয়, মানে নক্ষত্র মৃত্যুর পর ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়, তাহলে ঘটনাটি কেমন হতো? এরা সর্বোচ্চ সূর্যের চেয়ে বিশ গুণ ভারী হতে পারে। এরকম একটা ব্ল্যাকহোল যদি সৌরজগতের প্রান্ত স্পর্শ করে, তাহলে ওর্ট ক্লাউডে একধরনের মহাকর্ষীয় বিপর্যয় ঘটে যেত। ওর্ট ক্লাউড বলতে সৌরজগতের সীমানায় অবস্থিত গ্রহাণু, উল্কা, ধুমকেতুর আবাসস্থলকে বোঝায়। ব্ল্যাকহোলের প্রচণ্ড মহাকর্ষের কারণে এসব বস্তু সৌরজগতের ভেতরের দিকে চলে আসত। গ্রহগুলোতে শুরু হতো ভয়াবহ উল্কা বৃষ্টি।
তবে ঘটনা তো কেবল শুরু। ব্ল্যাকহোলটি সরাসরি সৌরজগতের ভেতর দিয়ে যেতে চাইলে, কক্ষপথ থেকে ছিটকে যেত গ্রহগুলো। পরিণত হতো জ্বালানীতে। পৃথিবী থেকে প্লুটোর যে দূরত্ব, ওই দুরত্বে এলেই পৃথিবী ওপর পড়ত ব্ল্যাকহোলের প্রত্যক্ষ মহাকর্ষীয় প্রভাব। সৌরজগতের বাসযোগ্য অঞ্চলে থেকে ব্ল্যাকহোলের দিকে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে পড়ত পৃথিবী। মানুষ এই পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন বটে।
অবশ্য হাতে খুব একটা সময় থাকত না ওমন অবস্থায়। ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণে কাছে যাওয়ার সময় পৃথিবীর ভূত্বকে ফাটল ধরতে শুরু করত। ভূমিকম্প আর অগ্ন্যুৎপাত শুরু হতো প্রচণ্ডভাবে। সেই সঙ্গে থাকতো ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পুরো ভূপৃষ্ঠ ঢেকে যেত গলিত ম্যাগমার স্রোতে। এমন পরিবেশে গ্রহের গঠনই পাল্টে যেত। ধীরে ধীরে ব্ল্যাকহোলের চারপাশের ইভেন্ট হরাইজনে উত্তপ্ত প্লাজমায় পরিণত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতি ঘটত। তবে এসব দেখার জন্য আপনি আমি কেউই আর তখন বেঁচে থাকতাম না। এর অনেক আগেই প্রাণ মুছে যেত পৃথিবী থেকে।
তবে ভাগ্য কিছুটা ভালো হলে অস্থির মহাকর্ষের সময় পৃথিবী বেরিয়ে পড়ত সৌরজগত ছেড়ে। শীতল প্রাণহীন ভবঘুরে গ্রহে পরিণত হতো পৃথিবী। শুধু পৃথিবী কেন, নাক্ষত্রিক ভরের ব্ল্যাকহোলের কারণ পৃথিবীসহ অনেক গ্রহ উপগ্রহই বেঁচে যাওয়া সম্ভাবনা থাকত। বেঁচে যাওয়া বলতে ব্ল্যাকহোলের সরাসরি না পড়ে মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে পারে এরা। তবে যেটাই হোক তা বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।