জুমবাংলা ডেস্ক : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল হোসাইনের অনেক টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে এলাকাজুড়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা গেছে, উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল হোসাইনের টিকটক অ্যাকাউন্টে ৩ শতাধিক ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। তাতে ফলোয়ার রয়েছে ৩ হাজার ৩৩৭ জন, লাইক করেছেন ৯ হাজার ৩২১ এবং তিনি ফলো করেছেন ৬৪১ জনকে।
তার টিকটক ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন ভাইরাল গানের সঙ্গে নিজেকে তাল মিলিয়ে নানান অঙ্গভঙ্গিতে নেচে নেচে ভিডিও মেকিং করেছেন তিনি। শিক্ষকের এমন কাণ্ডে হতবাক এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আদনান হাসান লিখেছেন- অধিকাংশ ভিডিওতে স্কুলের চিত্র, তাহলে বুঝা যাচ্ছে স্কুল চলাকালে এসব টিকটক করা হয়েছে। এটা ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
রফিকুল ইসলাম লিখেছেন- এ রকম টিকটকার স্যার যদি স্কুলে থাকে তাহলে ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় মনোযোগী না হয়ে স্যারের টিকটককেই ফলো করবে। আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারছি না- স্যারকে কি স্কুলে টিকটক করার জন্য সরকারি চাকরি দিছে নাকি?
ফারুক লিখেছেন, যার ভিতরে কোনো সুশিক্ষা নেই, তাকে কিভাবে সরকার চাকরি দিয়েছে। তারা শুধু টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে। আসলে টাকা থাকলে সার্টিফিকেটের কোনো প্রয়োজন লাগে না। আর সে কারণেই আজ ঘরে ঘরে বসে আছে সার্টিফিকেট ও সুশিক্ষিত ছাত্রগুলো। এরকম টিকটকার মাস্টার যদি প্রত্যেক স্কুলে একজন করে থাকে তাহলে আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ মেধাশূন্য হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানায়, স্যারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এলাকার লোকজন বলাবলি করছেন- তোদের স্কুলের স্যার নাকি টিকটক ভিডিওতে নাচ-গান করে ইন্টারনেটে ছাড়েন? মানুষের এমন প্রশ্ন শুনে আমরা লজ্জিত।
পারভেজ ভুঁইয়া বলেন, বাঁশতলা চৌধুরী পাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য স্কুলে এ রকম শিক্ষককে ভাবতেই লজ্জা লাগে। যে স্কুলের শিক্ষকদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হতো, আর এখন সেই স্কুলের শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি।
হুমায়ুন কবির জানান, শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। যে শিক্ষক এমন টিকটিক ভিডিও করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে শিক্ষক নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আমার টিকটক ভিডিও ছড়িয়ে আমার মানসম্মানের হানি করছে, কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জসিম আহমেদ চৌধুরী রানা জানান, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নাজমুল স্যারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাছিব উদ্দিন মেম্বার বলেন, লোকমুখে ওই শিক্ষকের টিকটক ভিডিওর কথা শুনেছি। একজন আমাকে দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক রঞ্জন পুরকায়স্থর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মোর্শেদ মিশু বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এখনো আমি দেখিনি। যদি নৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে পড়ে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।