বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল-কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ থাকছে না। এর পরিবর্তে সহকারী অধ্যাপক পদ যুক্ত করা হচ্ছে। সংশোধন হতে যাওয়া নীতিমালায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির মানদণ্ডে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে। এর মধ্যে কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানো এবং পাসের হারও কমানো হতে পারে। শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। বিষয়টি সভায় চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে এমপিও নীতিমালা সংশোধনী সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অনার্স-মাস্টার্স কলেজ শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিদ্যমান এমপিও নীতিমালার কিছু বিষয়ে সংশোধন করা হবে। সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়, কি না হয় তা আগে বলা সম্ভব নয়। সভার রেজ্যুলেশন বের হওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে জারি করা নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ সৃষ্টি করা হলেও সংশোধনীতে তা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগের মতোই সহকারী অধ্যাপক পদে প্রভাষকদের পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সাড়ে চার বছর পর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজের শিক্ষকদের পদোন্নতির কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনা হলো। নীতিমালায় ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ পদটি বিলুপ্ত করে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির সুযোগ চালু করা হয়েছে। এর ফলে এমপিওভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষকেরা আবারও পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপক পদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড আগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদের মতোই রাখা হয়েছে।
সংশোধন হতে যাওয়া নীতিমালায়, এমপিওভুক্ত প্রভাষকরা আট বছর সন্তোষজনক চাকরির পর মূল্যায়ন সূচকে ১০০ নম্বরের মধ্যে নির্ধারিত মান অর্জন করলে প্যাটার্নভুক্ত মোট পদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। অন্যদিকে, যারা এই তালিকায় থাকবেন না, তারা ১০ বছর চাকরির পূর্তিতে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড–৯ থেকে গ্রেড–৮–এ উন্নীত হবেন। ধারাবাহিকভাবে ১৬ বছর এমপিওভুক্ত থাকলে তারাও সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হবেন। এ পদের বেতন গ্রেড–৬–এ নির্ধারিত থাকবে, যা আগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের সমান।
নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগে এ পদে আবেদন করতে পারতেন এমপিওভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজের অধ্যক্ষ, ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ, ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকরা।
এখন সংশোধনীতে তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একটি নতুন ধারা—স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর বা চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সমগ্র শিক্ষাজীবনে একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ নয়) ডিগ্রিধারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকরাও নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সংশোধন অনুযায়ী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা যদি অন্তত দুই বছরের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং মোট ১৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকে, তবে তারা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হতে পারবেন। একইভাবে, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্তত তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১৫ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকলেও আবেদন করা যাবে।
এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে ইনডেক্সধারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক বা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১৫ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকলে নিয়োগের যোগ্য ছিলেন। এখন নতুন নীতিমালায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে অন্তত তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১৭ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপিও নীতিমালা সংশোধন নিয়ে একাধিক সভা হয়েছে। আগামীকালকের সভাটিই চূড়ান্ত সভা। সভায় আগের কিছু সিদ্ধান্ত নীতিমালায় যুক্ত করা হবে।’
সূত্র: ডেইলি ক্যাম্পাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



