স্কেচ কমেডি হলো হাস্যরসাত্মক নাটিকা যা দলগতভাবে পরিবেশন করা হয়। নাটিকাগুলো সাধারণত এক থেকে দশ মিনিট দীর্ঘ হয়ে থাকে। স্কেচ কমেডির বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যপূর্ণ, যা নির্ভর করে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের ওপর। রাজনীতি, সাম্প্রতিক বিষয় থেকে শুরু করে উদ্ভট কোন বিষয়; সব কিছুই স্কেচ কমেডির বিষয়বস্তু হতে পারে।
২০০৮-০৯ সালে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এজন্য আয়ারল্যান্ডে ঐসময় চাকুরি পাওয়া কঠিন ব্যাপার ছিলো। শন ফিনেগ্যান, কনর ম্যাককেনা ও শন ফ্ল্যানাগান নামের তিন আইরিশ তরুণ ডাবলিনের ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। তখন তিন বন্ধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে আয়ারল্যান্ডের একমাত্র স্কেচ কমেডি গ্রুপ “ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ” এর জন্ম দেন।
“ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ” মূলত রেডিও, টিভি, মঞ্চ ও অনলাইনে স্কেচ কমেডি পরিবেশন করে থাকে। শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ডের কিছু টিভি অনুষ্ঠানে কাজ করেছে এই দলটি। এখন মঞ্চে ও অনলাইনেই স্কেচ কমেডি উপস্থাপন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা। প্রতি বৃহস্পতিবার ইউটিউব, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে নতুন কমেডি ভিডিও প্রকাশ করে থাকে “ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ”।
এর মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক ফ্যান ফলোয়িং গড়ে উঠেছে তাঁদের। অসংখ্য ভাইরাল ভিডিও রয়েছে, যা অর্জন করে নিয়েছে মিলিয়নের বেশি ভিউ। এখন পর্যন্ত তাদের ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর সংখ্যা ৪৩০, যা দেখা হয়েছে ১৮ কোটি বারের বেশি। দলটি নিয়মিত ইউ কে, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইউ এস এ, কানাডা ইত্যাদি দেশে লাইভ শো করে থাকে। স্বীকৃতি হিসেবে ঝুলিতে রয়েছে কিছু পুরস্কারও।
“ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ” এর অনলাইন স্কেচ কমেডির ভিডিওগুলো বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাঁরা কখনো বাস্তবিক পৃথিবীর গুরুগম্ভীর কোন বিষয় ভিডিওতে তুলে আনেন, কখনো বা উদ্ভট, আবোলতাবোল ও আজগুবি কিছু। অনলাইন স্কেচ কমেডি ভিডিওগুলোর উল্লেখযোগ্য কিছু সিরিজ হলো ইমিগ্রেশন, কান্ট্রিজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, হাউজ পার্টি, অ্যান ফ্ল্যানাগান ও ওশিন, ম্যাককরম্যাক ফ্যামিলি ইত্যাদি।
ইমিগ্রেশন সিরিজে দেখা যায় দেশে ঢুকতে দেবার আগে দুই অভিবাসীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এক ইমিগ্রেশন অফিসার, এই প্রশ্ন আর উত্তরে হাস্যরস, করুণ রস ও নির্মম বাস্তবতার এক দারুণ মিশেলের স্বাদ পাওয়া যায়। দেশগুলোর স্টেরিওটাইপ নিয়ে করা কৌতুক ইমিগ্রেশন সিরিজের বড় বৈশিষ্ট্য। কান্ট্রিজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড সিরিজে দক্ষতার সাথে রাজনীতি, ইতিহাস, ও সাম্প্রতিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
স্কেচ লেখা, সেট ডিজাইন করা, অভিনয় করা, পরিচালনা করা, সম্পাদনা করা, গান লেখা, সুর করা, গাওয়া থেকে এ সংক্রান্ত সমস্ত কাজ দলের তিন সদস্য মিলে সামলে থাকেন। ভিডিওগুলো দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে।
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রামসহ সব মূল ধারার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ” এর রয়েছে সরব উপস্থিতি। এছাড়া পাঁড় ভক্তদের জন্য রয়েছে একটি প্যাট্রিয়ন চ্যানেল, যেখানে নিজের পছন্দমতো মাসিক ফি’র বিনিময়ে ভক্তরা পেয়ে যান সবগুলো লাইভ শো দেখার সুযোগ, সেই সাথে দেখতে পান এক্সক্লুসিভ ছবি, ট্যুর ভ্লগ, স্কেচ তৈরির পেছনের গল্প, মজার সব লাইভস্ট্রিমসহ আরো অনেক কিছু।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া “ফয়েল আর্মস অ্যান্ড হগ”-এর যাত্রা ১৪ বছর পরও চলছে দাপটের সাথে, নিরন্তর শিখতে ও পরীক্ষা করতে থাকা দলটি এখন আরো পরিণত। তাদের কাজ দেখলে যে বিষয়টি সব ছাপিয়ে চোখে পড়তে বাধ্য সেটি হল কাজটি তারা কতটা উপভোগ করেন। আয়ারল্যান্ডের একমাত্র স্কেচ কমেডি গ্রুপ হিসেবে এই যাত্রাপথে তাদের অনেক বাধা ও সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে, কিন্তু সব উতরে গেছেন প্রতিভা, পরিশ্রম ও বন্ধুত্বের জোরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।