১৮১৬ সালের একদিন প্যারিসের নেকার হাসপাতালের ডাক্তার রেনে লাইনেক বেশ বিপদে পড়ে গেলেন এক রোগীর হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনতে গিয়ে। তখন ইউরোপে যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল অনেক বেশি। ডাক্তার রেনে লাইনেকের তরুণী রোগীর শারীরিক আয়তন বিশাল।
তার বুকে কান লাগিয়ে যে শব্দ শোনা গেল, তাতে রোগ নির্ণয় করা গেল না। ভালো করে কান লাগিয়ে শব্দ শোনারও কোনো উপায় নেই। ফ্রান্সের মানুষ এমনিতেই নিয়মিত গোসল করে না, তার ওপর অসুস্থ হলে তো কথাই নেই। রোগীর গায়ের গন্ধে যেখানে কাছে যাওয়া যায় না, সেখানে বুকে কান লাগিয়ে ফুসফুসের শব্দ শোনা! কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না ডাক্তার লাইনেক।
পায়চারি করতে করতে হাসপাতালের বাগানের বেঞ্চে গিয়ে বসলেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন দুটো বাচ্চা ছেলে একটা লম্বা কাঠের দুদিকে কান লাগিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করছে। দুজনের হাতে দুটো পিন। তারা পিন দিয়ে আঁচড় কাটছে কাঠের গায়ে আর সেই আঁচড়ের শব্দ শুনছে কাঠের অন্য প্রান্তে কান লাগিয়ে। ডাক্তার লাইনেকের কাছে মুহূর্তেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। বাতাসে শব্দের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ১৯৩ কিলোমিটার।
পানিতে শব্দের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ৫ হাজার ৩৮৫ কিলোমিটার। কিন্তু কাঠের ভেতর দিয়ে শব্দ অনেক বেশি বেগে যেতে পারে। কাঠের মধ্য দিয়ে শব্দের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। বাচ্চা ছেলেরা যেভাবে শব্দ শুনছে, সেভাবেও তো রোগীর বুকের শব্দ শোনা যায়। ডাক্তার লাইনেক দ্রুত ওয়ার্ডে এলেন।
তাঁর হাতে একটা মেডিকেল জার্নাল ছিল। সেটাকে গুটিয়ে একটা চোঙার মত করে এক প্রান্ত রোগীর বুকে ঠেকিয়ে অন্য প্রান্তে নিজের কান লাগালেন। অনেক স্পষ্ট এবং জোরালো শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তটি ছিল ডাক্তার রেনে লাইনেকের জন্য ‘ইউরেকা’ মুহূর্ত। জন্ম হলো স্টেথোস্কোপের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।