সেলিম প্রামানিক (৩২) নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য পুলিশ উদঘাটন করে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বগুড়া-জয়পুরহাট সীমান্ত এলাকায় দুপচাঁচিয়ার বড়কোল গ্রামের মাঠ থেকে সেলিমের আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বড়কোল গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান (৫০) এবং তার মেয়ে সৌদি আরব প্রবাসী ইকরামুল ইসলামের স্ত্রী রূপালী বেগমকে (২৪)।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লাশটি উদ্ধারের পর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। প্রথমেই পোড়া লাশের শরীরে থাকা এক টুকরো কাপড় ও দাঁতের গঠন দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। এক সন্তানের বাবা সেলিম প্রামানিকের লাশ হিসেবে পরিবার নিশ্চিত করার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়।
পুলিশ প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানেই নিশ্চিত হয় যে, পরকীয়া সংক্রান্ত ঘটনার জেরেই খুন হয়েছেন সেলিম। এরপর তার প্রেমিকা রূপালী বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রূপালী ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করে।
পুলিশের কাছে রূপালী জানান, নিহত সেলিমের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পারিবারিকভাবে তাদের দুজনের অন্যত্র বিয়ে হয়। তারপরও মোবাইলে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। রূপালীর স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর দুজনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে রূপালীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন সেলিম। কিন্তু রূপালী সেলিমকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং রূপালীর স্বামী সৌদি প্রবাসী ইকরামুলের কাছে তাদের দুজনের কিছু একান্ত মুহূর্তের ছবি পাঠায়। বিষয়টি ইকরামুল তার স্ত্রীকে জানানোর পর সেলিমকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন রূপালী। পরে তিনি বিষয়টি তার বাবা আবদুর রহমানকে জানান এবং সংসার বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে বলে।
পুলিশের কাছে রূপালী আরও জানান, মেয়ের কথামতো আবদুর রহমান তিনজন ভাড়াটিয়া খুনির সঙ্গে চুক্তি করেন এবং মেয়েকে বিয়েতে রাজি হওয়ার কথা বলে সেলিমকে কৌশলে ডেকে নিতে বলেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে সেলিমকে বিয়ে করবেন বলে ডেকে নেন রূপালী। সেলিমকে নিয়ে দুই জেলার সীমান্তবর্তী ওই ফাঁকা মাঠে গিয়ে আগে থেকেই সেই মাঠের মাঝখানে অবস্থানরত তার বাবা ও ভাড়াটিয়া খুনিদের কাছে সেলিমকে রেখে রূপালী চলে যান। পরে সেখানেই সেলিমকে ওই চারজন মিলে খুন করা হয়।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে রূপালীর বাবা আবদুর রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি আরও জানান, ওই লাশ উদ্ধারের পর সেলিমের বাবা কফির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় বাবা-মেয়েকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানতে তাদের দুজনকে ১০দিন রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।