জুমবাংলা ডেস্ক : এক, দুই, তিন, পাঁচ কিংবা ১০টি নয়, একজনের নামে ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এগুলো আবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন নারী অফিসারের নামে। তিনি জানেনই না বিষয়টি। নিজের স্ত্রীর নামে এগুলো খুলেছেন স্বয়ং ব্যাংকের ম্যানেজার। তার নাম সাজেশ কান্তি দাশ ওরেফে সাজু। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জালিয়াতি করা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ওই নারী।
চট্টগ্রাম নগরে আইসিবি ব্যাংকের তিনটি শাখায় অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছে বছর চারেকের মধ্যে। স্বাক্ষর জাল করে অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ম্যানেজারের স্ত্রী শ্রাবণী দেব বর্মণ। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন বলে শঙ্কায় আছেন তিনি। এ ঘটনায় ম্যানেজার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্ত্রী। এর আগে জালিয়াতি করে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে আইসিবি ব্যাংকের এমডিকে লিখিত অভিযোগ করার পরই ম্যানেজারের চাকরি ছেড়ে দেন অভিযুক্ত সাজেশ। তিনি আইসবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার ছিলেন। অভিযুক্ত ম্যানেজার সাজেশ নগরের মাঝিরঘাট স্ট্যান্ডের বাসিন্দা। অভিযোগকারী শ্রাবণী রূপালী ব্যাংকের চৈতন্য গলি শাখার সিনিয়র অফিসার।
শ্রাবণী বলেন, ‘অন্ধকারে রেখে আমার স্বাক্ষর জাল করে এসব অ্যাকাউন্ট করেছেন সাজেশ। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করেছি আদালতে। পিবিআই মামলার তদন্ত করছে। আইসিবি ব্যাংকে অভিযোগ করার পর তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ২০টি অ্যাকাউন্ট করার বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে।’
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ইন্সপেক্টর কাজী এনায়েত কবীর বলেন, প্রতিটি অ্যাকাউন্টের মূল ফরম, গ্রাহকের নমুনা স্বাক্ষরসহ যাবতীয় ডুকমেন্ট পিবিআইকে সরবরাহ করার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি।
অভিযুক্ত সাজেশ বলেন, ‘এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১২-১৩টি ডিপিএস অ্যাকাউন্ট। এগুলো দুই-তিন মাস চালানোর পর ভেঙে ফেলেছি। আমার স্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে আমি কোনো অ্যাকাউন্ট করিনি। আমার স্ত্রী আইসিবি ব্যাংকে অভিযোগ করার পর আমার মান-সম্মান নষ্ট হওয়ায় চাকরিটি ছেড়ে দিয়েছি। পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত স্ত্রী মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের তিনটি শাখা আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জ ও জুবলী রোড শাখায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেছেন সাজেশ। তিনটি শাখায়ই শ্রাবণীর নামে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করেন। শ্রাবণীর নামে খাতুনগঞ্জ শাখায় ১২টি অ্যাকাউন্ট, আগ্রাবাদ শাখায় তিনটি এবং জুবলী রোড শাখায় পাঁচটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
২০২২ সালের শেষ দিকে স্ত্রী শ্রাবণী স্বামীর জাল-জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারেন। গত জানুয়ারিতে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। জানা গেছে, সাজেশের সঙ্গে ২০০৯ সালে শ্রাবণীর বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। একটি ১২ বছরের ও অন্যটির বয়স দুই বছর।
মামলার আরজিতে শ্রাবণী অভিযোগ করেন, বড় মেয়ে জন্মগ্রহণের পর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সাজেশের নির্যাতন নীরবে মুখ বুঝে সহ্য করতেন। আইসিবি ব্যাংকে চাকরি করার আগে এইচএসবিসি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানে পেশাগত অনৈতিক অসদাচরণের জন্য চাকরিচ্যুত হন। ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। এ ধরনের আচরণের কারণে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শ্রাবণী। তার পর দীর্ঘদিন পৃথক থাকলেও ২০১৯ সালে পারিবারিক মধ্যস্থতায় ফের একত্রে বসবাস শুরু করেন। তবে বর্তমানে তারা পৃথক থাকছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।