স্ত্রীর বুদ্ধিতে প্রশ্নফাঁসে জড়িত হন নোমান, বানান অঢেল সম্পত্তি

জুমবাংলা ডেস্ক : প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে সাবেক সেনা সদস্য মো. নোমান সিদ্দিকী।

বিয়ের পর থেকে তিনি অপকর্মে জড়ান এমন দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর। নোমান সবসময় স্ত্রীর কথায় চলেন বলেও জানান তারা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, নোমান ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়েন।

২০০৭ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের ওয়াবদা (বিদ্যুৎ) কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের মেয়ে সাফিয়া সুলতানা স্বর্নাকে বিয়ে করেন। স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্না ঢাকার মিরপুরে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। তিনিও চাকরি ছেড়ে দেন। বিয়ের পর থেকে পরিবারের কারো সাথে তার সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।

জানা যায়, নোমান যা কিছু করেছেন সবই স্ত্রীর কথায় করেছেন। স্ত্রীর কথা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। স্ত্রীর বুদ্ধিতে প্রশ্নফাঁসে জড়িত হন তিনি। সেনাবাহিনীতে চাকরি অবস্থায় তেমন কোন অর্থ বা সম্পত্তি ছিল না তার। অবসরে গিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে এসব করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আত্মীয় নোমান সিদ্দিকীর স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্না।

স্থানীয়রা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকা নোমান সিদ্দিকী মাঝে-মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তবে স্বাভাবিক চলাফেরা করতেন। গ্রামে তেমন কিছু করেননি। তার বাবা মৃত আবু তাহের ছিলেন সাধারণ মানুষ। তিনি কৃষি কাজ করতেন। তারা তিন ভাই। বড় ভাই মো. ওমর ফারুক রামদয়াল বাজারে ফার্মেসি ব্যবসা করেন, মেঝো ভাই মো.সালাউদ্দিন সেনাবাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। নোমান সিদ্দিকী ভাইদের মধ্যে ছোট।

তার ভাই ওমর ফারুক জানান, পারিবারিকভাবে নোমানের সাথে পরিবারের কারও যোগাযোগ নেই। বিয়ের পর থেকে সে ঢাকায় থাকেন। তার তিন সন্তান রয়েছে। তার বাবা মারা যাওয়ার আগ থেকে পারিবারিক সম্পর্ক বিছিন্ন রয়েছে। কখনো বাড়িতে আসলে সে একা থাকেন। পরিবারের কারও সাথে কথা বা যোগাযোগ করেন না। গ্রামে তার তেমন কোনো সম্পত্তি নেই। যা কিছু রয়েছে বাবার অর্পিত সম্পত্তি। তার ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না। তবে খবরে দেখেছি সে প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তার হয়েছে।

পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে পুলিশের অভিযানে ১৭ জন মূলহোতা গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে গাড়ির ড্রাইভার আবেদ আলীর কাছ থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে বেচা-বিক্রি করতেন নোমান সিদ্দিকী। তিনি সাধারণ সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিক থেকে অবসরে গিয়ে ধনী বনে যান ও গড়ে তোলেন অঢেল টাকা ও সম্পদ।

আদালত সূত্র জানায়, এক সময় একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি করতেন। ২০০৪ সালে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চাকরির তদবির করতেন। তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় অর্থ বিভাগের অডিটর প্রিয়নাথ রায়ের সঙ্গে। প্রশ্নপত্র বিক্রি করে নোমান ঢাকার পাশেই একটি তৈরি পোশাক কারখানা দিয়েছেন। থাকেন মিরপুর ১০ নম্বরের সেনপাড়া পর্বতার ৪৫৮/৪ নম্বর ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের মালিক তিনি নিজেই।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসের চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড নোমান। অন্যতম হোতা আবেদ আলী ও সাজেদুল। ২০১৫ সালে মেডিকেলের প্রশ্ন বিক্রি করে এই চক্রের সদস্যদের ৫ কোটি টাকা লাভ হয়। এরপর তারা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আবেদ আলী ২০১৩ সালে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে যে টাকা উপার্জন করতেন- সেটি বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করে ফেলেন। তার কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। টাকার পাহাড় গড়েছেন নোমান ও সাজেদুলও। কিন্তু তারা জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের সম্পদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেননি।

মূলতঃ পিএসসির পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবীরকে ব্যবহার করতেন নোমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ও সৈয়দ আবেদ আলী। পিএসসির অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হতো। ওই কর্মকর্তারাই প্রশ্নের ব্যবস্থা করে দিতেন। পরে এরা চক্রের অন্য সদস্যের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করে বিভিন্ন জায়গার বুথে নিয়ে উত্তরপত্র মুখস্থ করাতেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কিনেও নিতের চক্রেরই কয়েকজন সদস্য। তারা সেটি নিজস্বভাবে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বিক্রিও করতেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনায় এখনো পলাতক রয়েছেন পিএসপির একজন সাবেক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ এজাহারনামীয় আসামি। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা চীনা প্রধানমন্ত্রীর