বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বের প্রথম স্থলভিত্তিক স্মল মডিউলার রিয়্যাক্টর (এসএমআর) বা ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে রাশিয়া। ২০২৮ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রসাটম এর কর্মকর্তারা আশা করছেন।
আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রিঅ্যাক্টরগুলোকে ছোট মডিউলার রিঅ্যাক্টর, অর্থাৎ এসএমআর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বড় ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা অনেক বেশি উন্নত। দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কম। এর পরও কোনো কারণে এটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তাপ বর্জনের ব্যবস্থা আছে।
শনিবার রসাটমের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য আর্কটিক মহাসাগর উপকূলে অবস্থিত ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের স্থলভাগে নির্মানাধীন এই ক্ষুদ্র পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত হবে সর্বাধুনিক আরইটিএম—২০০এন রিয়্যাক্টর।
সেন্ট পীটার্সবার্গে অবস্থিত রসাটমের যন্ত্র প্রকৌশল শাখার অধীনস্থ একটি কারখানায় এসএমআরটির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্মাণ শুরু হয়েছে। স্টেইনলেস স্টীল থেকে নির্মিত ১৬৫ টনের অধিক যন্ত্রপাতির মেটালার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে।
রসাটম যন্ত্রপ্রকৌশল শাখার প্রধান ইগোর কতোভ বলেন, “ক্ষুদ্র পারমাণবিক কেন্দ্রের চাহিদা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। ক্ষুদ্র রিয়্যাক্টরগুলোকে বিশ্বে পরমাণু শক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সম্ভাবনাময়য় হিসেবে বিবেচনা করছে। রাশিয়া এই ক্ষেত্রেও তাদের নেতৃত্ব বজায় রাখতে ইচ্ছুক এবং পরীক্ষামূলক ইউনিটের পরিবর্তে ক্ষুদ্র বানিজ্যিক রিয়্যাক্টর উৎপাদনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে”।
স্থলভিত্তিক এই ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটের নির্মান কাজ সম্পন্ন হলে এটি দূরবর্তী ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের এনার্জী সুরক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
বিশ্বে এ জাতীয় প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে একটি পাওয়ার ইউনিট থাকছে এবং ইউনিভার্সাল নিউক্লিয়ার আইসব্রেকারে ব্যবহৃত আধুনিক আরআইটিএম—২০০ রিয়্যাক্টরের ভিত্তিতে তৈরি আরআইটিএম—২০০এন রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হচ্ছে। এর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯০ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মেগাওয়াট। এই রিয়্যাক্টরের আয়ুস্কাল ৬০ বছর। একবার জ্বালানি লোড করা হলে তা দিয়ে চলবে টানা ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত।
তেল, গ্যাস ও কয়লার বাজার অস্থিতিশীল এবং এসব জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকা এবং পরিবেশ দূষনের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমানুর ব্যবহার বাড়ছে। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি এসএমআর রিয়্যাক্টর একটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। দূরবর্তী ও দূর্গম অঞ্চলে বিরতিহীনভাবে দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনেকেই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা করছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে এর ব্যবহার আরও বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছে রসাটমের করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে থ্রি প্লাস প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।