মানুষের মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিযান হল, দ্য স্পেস শাটল প্রোগ্রাম। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত এই অভিযানে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্পেস শাটল কোন একক মহাকাশ অভিযান নয়। এটা মূলত বিশেষ ধরনের রকেটের নাম।
অ্যাপোলো চন্দ্র অভিযানে একবার ব্যবহার করার উপযোগী রকেট ব্যবহার করা হতো। সেসব রকেটের মাথায় বসানো থাকতো মূল নভোযান। পৃথিবীর অভিকর্ষ পেরিয়ে মহাকাশে যাওয়ার পর রকেট থেকে মুক্ত হয়ে ছুটতো নভোযানগুলো। ব্যবহৃত রকেটগুলোর ঠাঁই হতো পৃথিবীর মহাসাগরের তলদেশে।
প্রতিবার মহাকাশ অভিযানের জন্য নতুন করে রকেট তৈরি বেশ খরচের বিষয় ছিল। এ সমস্যা সমাধানেই হাতে নেওয়া হয় স্পেস শাটল প্রোগ্রাম। স্পেস শাটল রকেটগুলো দেখতে ছিল অনেকটা উড়োজাহাজের মতো। বায়ুগতি কাজে লাগিয়ে এগুলো আকাশে উড়তে পারত। প্রয়োজন মতো মহাকাশযান বা মালামাল বহন করে নিয়ে যেত আকাশে। পৃথিবী কক্ষপথে এসব মালামাল পৌঁছে দিয়ে আবার ঠিক ঠিক অবতরণ করতে পারত মাটিতে। কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই। স্পেস শাটলের রকেটকে ব্যবহার করা যেত একাধিকবার।
স্পেস শাটল রকেট তৈরির উদ্দেশ্য ছিলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ প্রয়োজনীয় মালামাল পাঠানো। বিখ্যাত হাবল টেলিস্কোপ মেরামতের কাজও করা হয় এই রকেট ব্যবহার করে।
এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে পাঁচটি স্পেস শাটল রকেট তৈরি করা হয়েছিল। এদের নাম যথাক্রমে কলম্বিয়া, চ্যালেঞ্জার, ডিসকভারি, আটলান্টিস ও অ্যাভেন্ডার। এর মাঝে দুটি স্পেস শাটলে কারিগরি ত্রুটি দেখা মহাশূন্যে। ফলে ১৪ জন নভোচারী প্রাণ হারান।
স্পেস শাটল রকেটগুলো বারবার করা হলেও পুরো প্রোগ্রামের খরচ কিন্তু কম নয়। এর একটি কারণ, প্রতিবার মহাকাশ অভিযানের পর এর সব অংশ ব্যবহার করা যেত না। বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় এর অনেক যন্ত্রই পুরোপুরো নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে স্পেস শাটলের জ্বালানী ট্যাংক প্রতিবার নতুন করে তৈরি করতে হতো।
শুরুতে নাসার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, প্রতিটি স্পেসশাটল মহাকাশে পাঠাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। কিন্তু পরে দেখা যায়, প্রথমদিককার প্রতিটি উৎক্ষেপণে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার করে খরচ হচ্ছে। শেষের দিকে প্রতি উৎক্ষেপণের জন্য খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৯৭২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্পেস শাটলের প্রোগ্রামের রকেটগুলো ব্যবহৃত হতো। তবে, স্পেস শাটলের প্রযুক্তি সেই আশির দশকের পর আর হালনাগাদ করা হয়নি। স্পেস শাটলের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ উৎপাদনও কমে যায় একটা সময়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারই ছিল এসব যন্ত্রাংশের একমাত্র ক্রেতা। কিছু কোম্পানি এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে ৩০ বছরের মাঝে দেউলিয়া হয়ে যায়। বাকি কোম্পানিগুলো এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বেড়ে যায় পুরো প্রোগ্রামের খরচ। স্পেস শাটল প্রোগ্রাম পরিণত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাকাশ অভিযানে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।