জুমবাংলা ডেস্ক: “সড়ক পথে আরিচা বা মাওয়া পার হয়ে ঢাকা থেকে বরগুনাতে আসতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লেগে যেতো। এ দীর্ঘ সময় বিশেষ করে নারী যাত্রীদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর ছিলো। কারণ প্রাকৃতিক ডাক উপক্ষো করেই আমাদের দীর্ঘ সময় কাটাতে হতো। এসকল কারণে আমি নিয়মিত লঞ্চের যাত্রী ছিলাম। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর খুবই কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে এবং এ সেতুর প্রথম দিকের পারাপার হওয়া যাত্রী হতে রোববার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। এখন এ দুপুরেই বরগুনা পৌছে গেছি।”-বরগুনা এসে পৌঁছা সুগন্ধা বাসের যাত্রী কলেজ শিক্ষিকা ফেরদৌসি আক্তার এমনটাই জানালেন বরগুনার আমতলী বাস স্টপেজে বসে। এভাবেই পদ্মাসেতুর সুফল পাওয়া শুরু করেছেন বরগুনা অঞ্চলের সড়কপথের যাত্রীরা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান। তিনি রোববার সকাল ছয়টায় ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকা থেকে রওয়ানা করে আমতলীতে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে পৌঁছে ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করছিলেন। আক্তারুজ্জামান খান জানান, এখন থেকে আর একদিন আগে গিয়ে বসে থাকতে হবে না। দিনের দিনই ঢাকা গিয়ে বা ঢাকা থেকে ফিরে ‘অফিস আওয়ার’ ধরা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলে ঢাকা থেকে বরগুনায় সড়ক পথে আসার জন্য আর কোন ফেরি পারাপারের বাঁধা রইলো না। না। তাই নিয়ে উচ্ছাসিত এ জনপদের মানুষ। সময় সাপেক্ষ ও উত্তাল পদ্মার উপর দিয়ে নতুন সেতুর মাধ্যমে আগেভাগে পারাপার হয়ে আনন্দ নিতে এবং লঞ্চে যাতায়াতে অভ্যস্থ যাত্রীদের অধিকাংশই প্রথম দিকের বাসযাত্রায় অংশ নিতে বরগুনা-ঢাকা রুটের বাসের অগ্রিম টিকিট কিনেছিলেন। মল্লিকা বাস কাউন্টারের ইনচার্জ মাহাবুব হোসেন জানান, ২৫ জুনের পরে অর্থাৎ আজ রোববার থেকে যে সব যাত্রীরা বরগুনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাবেন তারা আগেভাগে অনলাইন ও অফলাইনে অগ্রীম টিকিট বুকিং করে রেখেছেন।
জেলার বাস সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন রূপে আধুনিক সুবিধা নিয়ে বাসে করে যাতায়াতে যাত্রীরা সড়কের দৃশ্য ও পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বরগুনা ও পটুয়াখালীর মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করতে নতুন নতুন বেশ কয়েকটি আধুনিক বাস নামছে এ রুটে।
রোববার ঢাকা থেকে আসা সুগন্ধা বাসের চালক সোহরাব হোসেন জানান, বারো থেকে চৌদ্দ ঘন্টার ট্রিপের দিন শেষ হয়েছে। কোন ধরনের জটিলতা না থাকলে মোটামুটি পাঁচ ঘন্টার যাত্রায় আমরা ঢাকা-বরগুনা যাতায়াত করবো। আগে যেখানে ফেরিঘাটেই তিন থেকে চার ঘন্টা লেগে যেতো, -আবার অনেক সময়ে সারা দিনও; আজ মাত্র সাত থেকে আট মিনিটেই সেই পদ্মা পার হয়ে চলে এসেছি।
ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় ছেড়ে আসা মল্লিক পরিবহনের চালক শহিদুল ইসলাম জানান, একেবারে ‘ফুল বুকিং’ ছিলো আজকের ট্রিপে। আগে এমনটি ঘটতো শুধুই ঈদের সিজনে।
এ রুটে আর কোন ফেরি না থাকায় যাতায়াত করলে অতি কম সময়ে ঢাকা থেকে বরগুনায় পৌঁছানো যাচ্ছে বলে উচ্ছাস প্রকাশ করে একটি সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি হাসান জানালেন, যোগাযোগের নতুন দিগন্ত শুরু হয়েছে। এখন আর শহরের মানুষ বরগুনার মতো প্রত্যন্ত জেলায় কাজ করতে আসতে অনীহা প্রকাশ করবে না।
সোনার তরী বাস কাউন্টারের ইনচার্জ সাইফুল উসলাম ও সৌদিয়া কাউন্টারের ইনচার্জ তৌহিদ হোসেন জানান, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি আমরা।
বরগুনা বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক স¤পাদক মো. গোলাম কবির জানিয়েছেন, সারাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে বরগুনায় বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস চালুর কথা রয়েছে। ৭ থেকে ১০টি কো¤পানি রুট পারমিট চেয়ে চিঠি দিয়েছেন মালিক সমিতির কাছে।
সরকারি বিআরটিসি বাসসহ বিভিন্ন নামিদামি কো¤পানি এ রুটে তাদের অত্যাধুনিক বাস নিয়ে আসবে বলে জানান, বিআরটিসি কাউন্টার ইনচার্জ নাননু আকন। তিনি আরও জানান আমরা যাত্রীদের কথা চিন্তা করে নতুন সুবিধা নিয়ে নতুন রূপে নতুন সেতুতে বাস চলাচলের জন্য আগের বাসগুলো প্রস্তুত করে রেখেছি।
বরগুনা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাবেক সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন বরগুনা থেকে ঢাকাগামী অনেকগুলো বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করে এর জন্য বাসের যাত্রী আগে কম ছিল। পদ্মা সেতুর কল্যাণে বাসের যাত্রী দ্বিগুন বেড়েছে। যাত্রিরা যদি সাপোর্ট করে তাহলে আগামী দিনগুলোতে এ রুটে আরও অত্যাধুনিক বাস নিয়ে আসা সম্ভব। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।