আরিফুল আমীন রিজভী, বাসস: ফেনী পৌর মৎস্য আড়ত হতে প্রতিদিন গড়ে ১৭০ টন বিভিন্ন ধরণের মাছ বিক্রি হয়, টাকার অংকে যা প্রায় দুই কোটি টাকা। এ বিবেচনায় বছরে ৭০০ কোটি টাকার মাছ এ বাজার হতে বিভিন্নস্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে ওপার হতে মাছের বর্তমান সরবরাহ দ্বিগুণ হতে পারে। এর মধ্যদিয়ে মাছ বিক্রি আরও ৩০০ কোটি টাকা বেড়ে হাজার কোটি হতে পারে। এমন সম্ভাবনার কথা জানালেন, বৃহত্তর খুলনা, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলা হতে মাছ পরিবহনকারী সংস্থার মালিক ও ফেনীর আড়তদাররা।
পৌর মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম জানান, চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মাছ আসে পদ্মার ওপার থেকে। বৃহত্তর খুলনা হতে প্রতিদিন গড়ে ১৫ টন হিমায়িত চিংড়ি ও কার্পজাতীয় মাছ আসে। এছাড়া শরীয়তপুরসহ পদ্মার ওপারের আশপাশের জেলা হতে আরও ১৫ টন মাছ অক্সিজেন ব্যবহার করে জীবিত অবস্থায় আসে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বড় আকারের রুই, কাতল, মৃগেল, কার্প ইত্যাদি। ৩০ টন মাছের বাজারমূল্যে প্রায় ৭০/৭৫ লাখ টাকা। এভাবে মাসে গড়ে ২৫ কোটি এবং বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাছ ওইসব অঞ্চল থেকে আসে। পদ্মা সেতু চালু হলে ওইদিক হতে দ্বিগুণ মাছ ফেনীতে আসবে। তখন মাছগুলো হবে জীবিত।
এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, মাছের বাজার আরও বড় হবে। পরিবহন ব্যয় কমবে তাই মাছের দামও কমবে।
ফেনীতে যেসব পরিবহনে মাছ সরবরাহ হয়ে থাকে তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ট্রান্সপোর্ট, আমিনিয়া ফিশ এবং বিসমিল্লাহ ফিশ অন্যতম। আনোয়ার হোসেন ট্রান্সপোর্টের অন্যতম মালিক মো. ফারুক হোসেন জানান, পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে ফেনীর সাথে খামারিদের সাথে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে, ব্যাপারীদের প্রভাব কমবে, মাছের সরবরাহ ব্যাপকহারে বাড়বে, দাম কমবে।
তিনি বলেন, মাছ পরিবহনকারী বেশিরভাগ ট্রাক শরীয়তপুর হতে ফেরি হয়ে লক্ষ্মীপুর হরিণা ঘাট দিয়ে পদ্মা পার হয়ে নোয়াখালী-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম যায়। লম্বা সময়ের যাত্রায় মাঝেমাঝে গাড়িগুলো যথাসময়ে ফেনী এসে পৌঁছায় না। চিংড়ি এবং কার্পজাতীয় মাছগুলো দুরত্ব ও সময়ের কারনে বরফ ও ককশীটের বাক্সে আসে। এতে মাছের স্বাদ ও দাম দুটোই কম থাকে। মাছের চাহিদা থাকলেও যোগান পর্যাপ্ত নেই।
মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী হাসান বলেন, বড় আকারের কার্পজাতীয় মাছের চাহিদা পূরণ হবে পদ্মা সেতু চালু হলে। তবে মাছের খাবারের দাম বেশি হওয়ায় দাম কমার সম্ভাবনা কম কিন্তু বাজারের আকার বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য ২৫ জুন উদ্বোধন হবে পদ্মা বহুমুখী সেতু। পদ্মার ওপারে উৎপাদনমুখী জেলাগুলোর সাথে সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যসকল জেলা। গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিষয়টিও আালোচিত হচ্ছে সর্বাগ্রে।
লাভবান হবেন মাছচাষিরা: পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে মাছের বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা। মাছ পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান আনোয়ার হোসেন ট্রান্সপোর্টের অন্যতম মালিক ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমান বাজার ব্যবস্থা মাছের ব্যাপারিরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। মাছচাষি হতে তারা মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মাছ ব্যবসায় এটি অনেক পুরনো। তাই সকল বাজারই ব্যাপারিদের সম্পর্কের জালে আবদ্ধ। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে দুরত্ব কমবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা মাছচাষিদের অনুকূলে যাবে। ঘের মালিকরা সরাসরি বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ সরবরাহ করার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে বহুবছর ধরে ব্যাপারিদের তৈরি করা বাজারে ভাটা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফেনী পৌর মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম বলেন, সরাসরি চাষিদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা গেলে মাছের সরবরাহ বাড়বে। সরবরাহ বাড়লে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
হিমায়িত কার্পজাতীয় মাছের চাহিদা কমবে: বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়ণে দেশি মাছের কদর রয়েছে। ফেনী পৌর মৎস্য আড়তের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চাহিদা মেটাতে ভোক্তাকে বড় আকারের মাছের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ চাহিদা সাধারণত হিমায়িত কার্পজাতীয় মাছের উপর নির্ভর করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দাম একটু বাড়লেও পদ্মা সেতুর বদৌলতে জীবিত বড় আকারের মাছ ফেনীর মাছবাজার গুলোতে মিলতে পারে।
সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থা সূত্র জানায়, অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে জীবিত মাছে ৫/৬ ঘন্টার মধ্যে ফেনীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
খুলনার পাইকগাছা এলাকার মাছচাষি শহিদুল জানান, বড় আকারের ঘের হওয়ায় বড় মাছ উৎপাদন সহজ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে নিশ্চিতভাবেই মাছ ব্যবসায় সুদিন আসবে।
যেসব স্থান হতে ফেনী আড়তে মাছ আসে: মৎস্য বিভাগ ফেনীকে মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বললেও মোট চাহিদার বড় অংশ বিভিন্ন জেলা হতে সরবরাহ হয়ে থাকে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম জানান, মুহুরী প্রকল্পসহ জেলা বিভিন্নস্থান হতে দৈনিক আনুমানিক ২৫ টন মাছ আড়তে আসে। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মাঝারি আকারের রুই, কাতল, মৃগেল অন্যতম। কুমিল্লা হতে পাঙ্গাশ মাছ বেশি আসে। সবধরণের মাছ মিলে এর পরিমাণ প্রায় ১৫ টন। প্রতিদিন গড়ে ২০ হতে ২৫ টন শিং মাছের বড় যোগান আসে ময়মনসিংহের তারাকান্দা, নেত্রকোনা ও মুক্তাগাছা হতে, জেলার বিভিন্ন ছোট বড় ঘের হতে আসে ১২ হতে ১৫ টন, খুলনাসহ অন্যান্য অঞ্চল হতে আসে অবশিষ্ট মাছ।
পদ্মার ওপারেও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ বাড়বে: বৃহত্তর খুলনা, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলা হতে মিঠাপানির মাছ বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম সরবরাহ হয়ে থাকে। একইসাথে চট্টগ্রাম হতে সামুদ্রিক মাছ ফিরতি পথে সেসব অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বর্তমানে সরবরাহের পরিমাণ কম হলেও পদ্মার ওপারে উন্নত যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় সরবরাহ উল্লেখক যোগ্যহারে বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মিঠাপানির মাছের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছের বাজার আরও বিস্তৃত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।