জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজার। অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর বড় দরপতনও হয়েছে। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। অপরদিকে তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল তেলের বাজার। শেষ কার্যদিবসে কিছুটা দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।
ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের কারণে গত ২০ এপ্রিল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋনাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরেই অবশ্য তেলের দাম বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৩৭ ডলার। পরের দিনের লেনদেনেই তা ৪০ ডলার স্পর্শ করে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে কিছুটা দাম কমে। তৃতীয় ও চতুর্থ কার্যদিবসে আবার কিছুটা বাড়ে তেলের দাম। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ দশমিক ৬৫ ডলারে ওঠে। তবে শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দশমিক ৩৩ ডলার কমে।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনে মজুত করায় চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়ছে। দফায় দফায় দাম বেড়ে স্বর্ণের দাম গত সপ্তাহের শুরুতে ছিল প্রতি আউন্স ১৭৬৯ ডলার।
প্রথম কর্মদিবসের লেনদেনে তা বেড়ে ১৭৭২ ডলারে উঠে যায়। তবে মঙ্গলবারের লেনদেনের শুরুতে তা ১৭৬৯ ডালারে নেমে যায়। অবশ্য পরে দাম বেড়ে ১৭৭৩ ডলারে ওঠে। আর বুধবার স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৭৮৯ ডলারে উঠে যায়।
এর ফলে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। অবশ্য তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বৃহস্পতিবার তা কমে ১৭৭৫ ডলারে নেমে যায়।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবারও স্বর্ণের দামে কিছুটা পতন হয়। অবশ্য শুক্রবার লেনদেনের শুরুতে দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১৭৭৮ ডলারে ওঠে। কিন্তু লেনদেনের শেষ দিকে দাম কমায় প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৭৪ দশমিক ৭৯ ডলারে থিতু হয়।
এতে শুক্রবার স্বর্ণের দাম দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ে দশমিক ২৪ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়েছে স্বর্ণের দাম।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে উঠে যায়।
তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। এক ধাক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। মার্চে দরপতন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
দফায় দফায় দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে স্বর্ণের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ায় গত ২২ জুন বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সাধারণত ভরিতে এক-দেড় হাজার টাকা করে বাড়ানো হলেও এবার এক লাফে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়ানো হয়।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা করা হয়।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বরাত দিয়ে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ফলে দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটি আজ (২২ জুন) সন্ধ্যায় টেলি-কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।