হাতের মুঠোয় একটুকরো চকচকে ধাতু। দেখে মনে হচ্ছে আপনি হয়তো কপাল খুলে স্বর্ণ পেয়ে গেছেন! কিন্তু যতই খুশি হন, একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যাবে, এটা হয়তো ‘ফুলস গোল্ড’। খবর জিওলজি ডট কম
স্বর্ণের মতো দেখতে হলেও যার প্রকৃত মূল্য একেবারেই নেই, সেই ধাতুটির আসল নাম পাইরাইট। বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে খনি এলাকা বা পাহাড়ি অঞ্চলে যারা স্বর্ণ খোঁজেন, তারা প্রায়ই এই বিভ্রান্তিতে পড়েন। এ জন্যই পাইরাইটের আরেক নাম ‘ফুলস গোল্ড’ মূর্খের স্বর্ণ।
অভিজ্ঞ স্বর্ণ খনির শ্রমিকরা বহু আগেই এর সঙ্গে পরিচিত হলেও সাধারণ মানুষ এখনো প্রতারিত হচ্ছেন এর চকচকে রূপ দেখে। তবে স্বস্তির কথা হলো, একটু অভ্যাস আর কিছু সহজ পরীক্ষার মাধ্যমেই স্বর্ণ ও পাইরাইটের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব।
পাইরাইট কেন হয় বিভ্রান্তির কারণ?
স্বর্ণের মতোই উজ্জ্বল হলুদাভ রঙ, ধাতব ঝিলিক আর শক্ত গঠন, এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই পাইরাইটকে স্বর্ণের মতো করে তোলে। কিন্তু মূল পার্থক্য হলো এর রাসায়নিক ও শারীরিক গঠনে।
স্বর্ণ একটি দুষ্প্রাপ্য, নরম ও ভারী ধাতু হলেও পাইরাইট এক ধরনের লোহা ও সালফারের যৌগ, যা সস্তা ও প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়।
পাইরাইটের বাহ্যিক আকর্ষণ অনেক সময় এতটাই বাস্তবধর্মী হয় যে সাধারণ মানুষই নয়, অনেক সময় নতুন খনিশ্রমিক বা শৌখিন সংগ্রাহকরাও বিভ্রান্ত হন।
জেনে নিন পাইরাইট ও স্বর্ণের পার্থক্য করার সহজ উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি পরীক্ষা মেনে চললেই যেকোনো ব্যক্তিই অনায়াসে চেনাতে পারবেন আসল স্বর্ণ আর ধোঁকাবাজ পাইরাইট।
অধ্বংসাত্মক পরীক্ষা
রঙ: পাইরাইটের রঙ হয় ব্রোঞ্জের মতো ব্রাসি, আর স্বর্ণ হয় উজ্জ্বল হলুদ বা হালকা হলুদ সাদা (রুপা মেশানো থাকলে)।
ঝকঝকে ভাব ও মরিচা: প্রকৃত স্বর্ণ সহজে মরিচা ধরে না। পাইরাইটে প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা ঝাপসা ভাব বা মরিচা দেখা যায়।
আকৃতি ও গঠন: পাইরাইটের স্ফটিক ঘনক, অষ্টভুজ বা পাইরাইটোহেড্রন আকৃতির হয়। অন্যদিকে নদী বা পাহাড়ে পাওয়া স্বর্ণের টুকরো কিছুটা গোলাকার ও ঘষা ধরা হয়ে থাকে।
সূক্ষ্ম রেখা: পাইরাইটের স্ফটিকের মুখে থাকে সরু সরু রেখা। স্বর্ণের স্ফটিকে এই ধরনের দাগ থাকে না।
ঘনত্ব: স্বর্ণের ঘনত্ব পাইরাইটের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। হাতে নিয়ে দেখলেই বোঝা যায় স্বর্ণ অনেক ভারী।
ধ্বংসাত্মক পরীক্ষা: মূল্যবান নমুনা হলে এগুলো করার আগে সাবধানতা অবলম্বন করুন
দাগ পরীক্ষা: মাটির চূর্ণিত স্লেট বা টাইলসে ঘষে দেখলে স্বর্ণের দাগ হয় হলুদ, পাইরাইটের হয় সবুজ-কালো।
কঠিনতা পরীক্ষা: স্বর্ণের মোহ্স স্কেলে কঠিনতা ২.৫, যা তামার (মমোহস ৩) নিচে। পাইরাইটের স্কোর ৬-৬.৫, যা অনেক বেশি। পাইরাইট সহজে তামায় আঁচড় ফেলতে পারে, কিন্তু স্বর্ণ পারে না।
নমনীয়তা: স্বর্ণের একটি ছোট টুকরো সুই বা কাঠের টোকায় বেঁকে যায়, পাইরাইট ভেঙে যায়।
কাটা যায় কি না: ছোট স্বর্ণের টুকরো ছুরি দিয়ে কাটা যায়। পাইরাইটে চাপ দিলে ভেঙে যায়, কিন্তু কাটা যায় না।
সতর্ক থাকুন, আরও কিছু খনিজও আপনাকে ভুল পথে নিতে পারে! শুধু পাইরাইট নয়, আরও কিছু খনিজ আছে যেগুলো অনভিজ্ঞদের স্বর্ণের মতো মনে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
চ্যালকোপাইরাইট: দেখতে পাইরাইটের মতো হলেও আরও নরম ও হালকা। দাগ হয় সবুজ-কালো।
পাইরোহোটাইট: ব্রোঞ্জি রঙের এই খনিজটি চৌম্বকীয় ও অনেক বেশি নরম। স্বর্ণের সঙ্গে এর ভেদ বোঝা যায় চুম্বকের প্রতিক্রিয়া দেখে।
বায়োটাইট বা ফ্লোগোপাইট মাইকা: নদীতে স্বর্ণ খোঁজার সময় অনেকেই ঝিলমিলে মাইকা দেখে স্বর্ণের ভ্রমে পড়েন। তবে একটু চাপ দিলেই মাইকা ভেঙে যায়, স্বর্ণ বেঁকে যায়।
অনভিজ্ঞদের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, সামান্য কিছু স্বর্ণের ও পাইরাইটের নমুনা সংগ্রহ করে নিজের হাতে পরীক্ষা করে দেখা। এতে অভিজ্ঞতা তৈরি হবে এবং ভবিষ্যতে ভুলের সম্ভাবনা থাকবে না।
এছাড়া, যদি স্বর্ণের টুকরোটি দেখতে বিশেষ আকৃতির বা স্ফটিক থাকে, তবে সেটি সংগ্রহযোগ্য আইটেম হিসেবে আরও বেশি মূল্য পেতে পারে। তাই পরীক্ষার আগে ভালোভাবে চিন্তা করে নিন-ভুল করে দামী কিছু নষ্ট করে ফেলবেন না যেন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।