জুমবাংলা ডেস্ক : আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার স্মার্টফোন। রাস্তায় চানাচুর বিক্রেতা থেকে শুরু করে ছোট—বড়, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সব পেশার লোকজন স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। তরুণ, যুবক সব বয়সের লোকেদের সকালে ঘুম থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত যেন স্মার্টফোন ছাড়া চলে না। এদিকে নানামুখী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্মার্টফোন। তেমনি একজন যুবকের সন্ধান পাওয়া গেছে যিনি স্মার্টফোন ব্যবহারে আসক্ত হয়ে যাওয়ায় দিনের পর দিন ব্যবসায় লোকসান গুনেছেন। সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার ব্যবসায়ী নিউটন রায় এই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি পৌরসভার মধ্যবাজারে মেসার্স খগেন্দ্র লাল রায় স্টোরে গিয়েও এমন খবর মিলে।
জানা যায়, পাঁচ—ছয় বছর আগে বাবার ব্যবসায় হাল ধরেন হারনপুর গ্রামের খগেন্দ্র রায়ের ছেলে নিউটন রায়। তিনি দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করলেও একটা সময় বুঝতে পারেন তার অজান্তে ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। আর এই লোকসানের একমাত্র কারণ স্মার্টফোনে আসক্তি। ক্যাশে বসে সারাদিন মোবাইল চালানোর ফলে অন্যমনস্ক, হিসাবে ভুল, বাকিতে নেওয়া জিনিসের কথা খাতায় তুলতে ভুলে যাওয়া, বিরক্ত হয়ে কাস্টমার চলে যাওয়া, ফেসবুকে দেখা বিষয়গুলো মাথায় ঘুরপাক করার ফলে ব্যবসায় নানাদিক থেকে লোকসান হতে থাকে। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেয় নিউটন রায়।
নিউটন রায় বলেন, এটা আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। এই ব্যবসা করে বাবা আমাদের বড় করেছেন, লেখাপড়া করিয়েছেন। আমি পাঁচ-ছয় বছর ধরে ব্যবসাটা পরিচালনা করছি। বাবাকে এখন তেমন একটা আসতে দেই না। আমি স্মার্টফোনে বেশি আসক্ত ছিলাম। সকালে ক্যাশে বসা থেকে উঠার আগে পর্যন্ত মোবাইলে নেট খুব বেশি ব্যবহার করতাম। অনেক সময় দেখা যেত কাস্টমার ৫০ টাকার জিনিস নিয়ে ১০০টাকা দিলে আমি উল্টো তাকে ৪৫০ টাকা দিয়ে দিতাম। কাস্টমার চলে যাওয়ার পর সেই বিষয়গুলো ধরা পড়ত। তারপর অনেক সময় ফেসবুকে মজার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কাস্টমার টাকা না দিয়ে চলে যেত। অনেক কাস্টমার জিনিসের দাম জানতে চাইলে আমি মোবাইলে ব্যস্ত দেখে তারা জিনিস না কিনে চলে যেত। শুধু কি তাই ফেসবুকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন নিউজ দেখে সে সব বিষয় নিয়ে আমি প্রায় সময় গম্ভীর হয়ে ভাবতে থাকতাম। যার ফলে ব্যবসায় বিভিন্ন দিক থেকে লোকসান আসতে থাকে। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হলে আমি স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেই।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে একটু কষ্ট হলেও মানিয়ে নেই। আজ দুই বছর চলে স্মার্টফোন দোকানে নিয়ে আসি না। এমনকি আমার দোকানে দুই জন কর্মচারী থাকে তারাও ডিউটির সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। তবে রাত ১০ টায় বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমানোর আগে পাঁচ/দশ মিনিট মোবাইলে একটু দেশের খবরটা দেখে নেই।
কর্মচারী রিবেন সরকার বলেন, এই দোকানে আসার পর থেকে মহাজনকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেখিনি। তিনি আমাদের বুঝিয়ে বলেছেন। আমি এখন আর ডিউটির সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করি না। এর ফলে স্মার্টফোনে আসক্তি অনেকটা কমে গেছে।
ব্যবসায়ী নিউটনের পিতা খগেন্দ্র লাল রায় বলেন, আমার ছেলে এমসি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছে। সে এখন আমার গড়া প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। এই ব্যবসা দিয়ে আমি জীবনে অনেক কিছু করেছি। সে এখন এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোভাবে চালাতে কি করা প্রয়োজন, কি অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে আশা করি বুঝতে পেরেছে। আমাদের সময় এই স্মার্টফোন ছিল না, আমি মনযোগ সহকারে ব্যবসা করেছি বলেই সেটাকে দাঁড় কড়াতে পেরেছিলাম।
দিরাই সরকারি কলেজের আইসিটি প্রভাষক মিজানুর রহমান পারভেজ বললেন, পড়াশোনা কিংবা অন্য যে কোনো কাজের ফাঁকে স্মার্টফোনটি হাতে নিলেন, এরপর সময় কীভাবে যে কেটে গেল টেরই পেলেন না। এতে আপনার মূল্যবান সময় অপচয় হলো। এরকম ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে সময়ের অপচয়সহ শারীরিক ও মানসিক নানা ধরণের জটিলতা ডেকে আনছে। তাই বলব ব্যবসায়ী নিউটন রায় একটা দৃষ্টান্ত যিনি, স্মার্টফোনে আসক্ত হয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।