প্রতিদিনের জীবনে স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা ঘুম থেকে উঠেই ফোন দেখি, কাজ করি, বিনোদন উপভোগ করি—সবই এই একটিমাত্র ডিভাইস দিয়ে। কিন্তু আমরা যখন নতুন স্মার্টফোন কিনতে যাই, তখন কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি যেগুলোর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আজকের আলোচনায় জানব স্মার্টফোন কেনার সময় করা সেই সাধারণ কিন্তু গুরুতর ১০টি ভুল এবং কীভাবে তা এড়িয়ে যাওয়া যায়। এই প্রতিটি ভুল এড়িয়ে চললেই আপনার পছন্দের স্মার্টফোনটি হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী এবং সন্তোষজনক একটি প্রযুক্তি অভিজ্ঞতা।
Table of Contents
স্মার্টফোন কেনার সময় ভুল যেসব আমরা বারবার করি
স্মার্টফোন কেনার সময় ভুল এমন একটি বিষয় যা অনেকেই অজান্তেই করে থাকেন। নিচে এমন কিছু ভুল তুলে ধরা হলো যেগুলো প্রায়শই ক্রেতারা করে থাকেন:
১. ব্র্যান্ড নাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া
অনেকেই শুধুমাত্র ব্র্যান্ড নাম দেখে ফোন কিনে ফেলেন। যদিও বড় ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত নির্ভরযোগ্য হয়, তবে প্রতিটি মডেলের গুণগত মান একরকম নয়। যেমন, Apple বা Samsung-এর পুরোনো মডেলগুলো আজকের দিনে সেই পারফর্মেন্স দিতে নাও পারে। তাই ফোন কেনার আগে সেই নির্দিষ্ট মডেলটির রিভিউ পড়া উচিত।
২. ক্যামেরার মেগাপিক্সেল দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া
বেশিরভাগ ক্রেতা মনে করেন বেশি মেগাপিক্সেল মানেই ভালো ক্যামেরা। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ক্যামেরা ভালো না হলে সেন্সর সাইজ, অ্যাপারচার, ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার—এসব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, 12MP এর iPhone ক্যামেরা অনেক সময় 64MP Android ক্যামেরার তুলনায় ভালো ছবি তোলে।
৩. ডিসপ্লে সাইজ না বুঝে কেনা
অনেকেই শুধু বড় স্ক্রিন চায়, কিন্তু ৬.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে হয়তো সব ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাজনক নয়। হাতে ধরে দেখা, পকেটে রাখা ও দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করার সুবিধার কথা ভেবে সাইজ নির্বাচন করা উচিত।
৪. ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ভুল ব্যাখ্যা করা
৫০০০mAh ব্যাটারি মানেই ভালো ব্যাকআপ নয়। ব্যাটারি লাইফ নির্ভর করে Display refresh rate, Processor efficiency, Software optimization-এর ওপর। তাই শুধু mAh দেখে নয়, বাস্তব ব্যবহারের রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নিন।
৫. ফিচার দেখে নয়, প্রয়োজন বুঝে কেনা
অনেকেই ফিচার লিস্ট দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং এমন সব ফিচার বেছে নেন যেগুলোর দরকারই নেই। এতে অতিরিক্ত খরচ হয় ও ফোন ভারী হয়ে যায়। যেমন, 4K ভিডিও রেকর্ডিং বা 5G সাপোর্ট অনেকের জন্য এখনো প্রয়োজন না-ও হতে পারে।
৬. স্টোরেজ কম নেয়া
অনেকেই অর্থ বাঁচাতে গিয়ে কম স্টোরেজের ফোন কিনেন (যেমন 64GB), যা দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। আজকাল 4K ভিডিও, HD ছবি, বড় অ্যাপ—সবকিছুতেই জায়গা লাগে বেশি। তাই অন্তত 128GB স্টোরেজ রাখার চেষ্টা করুন।
৭. র্যাম সম্পর্কে ভুল ধারণা
বেশি র্যাম মানেই ভালো পারফরম্যান্স নয়। ৮GB র্যাম এবং দুর্বল প্রসেসরের ফোনের তুলনায় ৬GB র্যাম ও শক্তিশালী প্রসেসর ভালো পারফর্ম করে। তাই শুধু র্যাম নয়, প্রসেসরের শক্তি ও টাইপও বিবেচনায় নিন।
৮. সফটওয়্যার আপডেট না দেখা
অনেকেই ফোন কেনার আগে দেখে না সেই ফোনে কতদিন পর্যন্ত Software Update পাওয়া যাবে। Android ফোনের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পুরাতন ফোনে নতুন অ্যাপ ঠিকভাবে চলবে না।
৯. ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সেন্টার নিয়ে না ভাবা
ফোনটি কতদিন ওয়ারেন্টি দেয় এবং আপনার শহরে তার সার্ভিস সেন্টার আছে কি না, তা দেখে নেয়া জরুরি। সমস্যায় পড়লে সার্ভিস পাওয়া সহজ হবে।
১০. শুধুমাত্র ডিসকাউন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া
ছাড় পেলেই অনেকে ফোন কিনে ফেলেন, কিন্তু পরে বোঝেন ফোনটি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নয়। ডিসকাউন্ট যতই হোক, সেটি আপনার প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করলে সেটি ভালো ডিল নয়।
ভুল এড়াতে কীভাবে সঠিক স্মার্টফোন নির্বাচন করবেন
স্মার্টফোন কেনার সময় ভুল এড়াতে কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেওয়া হলো যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে:
- প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ: আপনি ফোন দিয়ে কী করবেন তা আগে ঠিক করুন—গেম খেলবেন, ভিডিও দেখবেন, অফিসিয়াল কাজ করবেন, নাকি সাধারণ ব্যবহার করবেন?
- বিশ্বস্ত রিভিউ দেখা: YouTube রিভিউ, Reddit কমেন্টস বা Tech Websites-এর রিভিউ দেখে মডেল নির্বাচন করুন।
- প্রসেসর ও সফটওয়্যার: Qualcomm Snapdragon, MediaTek Dimensity ইত্যাদি প্রসেসর এবং Android OS এর আপডেট পলিসি যাচাই করুন।
- রিটার্ন ও ওয়ারেন্টি: ফোনটি খারাপ হলে রিটার্ন নীতিমালা ও কতদিন ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়, সেগুলো ভালোভাবে দেখুন।
- ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা: অন্য ব্যবহারকারীর রিভিউ ও রেটিং অনুসরণ করুন।
স্মার্টফোন কেনার সময় ভুল এড়িয়ে চলা মানেই দীর্ঘমেয়াদে একটি ভালো সিদ্ধান্ত। ফোন কেনার আগে একটু চিন্তাভাবনা করলে আপনি সঠিক ডিভাইসটি বেছে নিতে পারবেন যা আপনার প্রয়োজন ও বাজেটের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হবে।
জেনে রাখুন-
স্মার্টফোন কেনার সময় কোন ফিচার সবচেয়ে জরুরি?
ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে Processor, Battery Backup, Display Quality, ও Software Support গুরুত্বপূর্ণ।
কোন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ভালো?
Samsung, Xiaomi, OnePlus, Apple, Realme—সব ব্র্যান্ডই নির্ভরযোগ্য, তবে মডেলভেদে পার্থক্য আছে। রিভিউ দেখে কেনা ভালো।
কম দামে ভালো স্মার্টফোন পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, তবে তাতে কিছু কমপ্রোমাইজ থাকতে পারে। আপনার চাহিদা বুঝে দাম ও ফিচার মিলিয়ে ফোন বাছাই করুন।
অনলাইন থেকে ফোন কেনা নিরাপদ?
বিশ্বস্ত ই-কমার্স সাইট (যেমন Amazon, Daraz) থেকে কেনা নিরাপদ, তবে বিক্রেতার রেটিং ও রিটার্ন পলিসি দেখুন।
ফোন কেনার আগে কী কী যাচাই করা উচিত?
Processor, RAM, Storage, Battery, Camera, Software Support, Warranty, ও সার্ভিস সেন্টার যাচাই করা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।