‘স্যার আমার বাচ্চাটি কাঁদছে-ঘরে খাবার নেই, বিকাল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে’

জুমবাংলা ডেস্ক : ”স্যার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার বাসায় চাল, ডাল, তেলসহ কিছু পাঠানো যাবে কি? বিকেল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে…।” রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার এক বাসিন্দা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি থানার অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এভাবেই সাহায্য চেয়েছেন।

ওই ব্যক্তি আরও লিখেছেন, ”তার হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। বিদ্যুৎ লাইনও বন্ধ হয়ে যাবে, মাত্র ১২ টাকা ব্যালেন্স আছে…।” এই ম্যাসেজ পেয়ে ডিএমপির এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরে ওই ব্যক্তি সাহায্য পেয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবারও এক ম্যাসেজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পুরো ঘটনাটা নিজের ফেসবুকে লিখে শেয়ার করেছেন মাহমুদা আফরোজ লাকী।

”অফিসিয়াল নম্বরে টেক্সটটি দেখেই খবর নেই কে এই ব্যক্তি। জানতে পারি সে আমার থানা এলাকার নয়, মিরপুর মডেল থানা এলাকার। তখনই জানাই অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। ডিসি স্যারের নির্দেশনায় দ্রুত চাল, ডাল বাজারের ব্যবস্থা করেন ওসি, মিরপুর। ধন্যবাদ ওসি, মিরপুরকে এমন মানবিক ব্যাপারে সহায়তা করার জন্য। এমন প্রায় প্রতিদিনই মোবাইলে কল ও টেক্সট আসছে। আমরা যতটুকু সম্ভব সহায়তা করছি। আমার সাধ্য নাই সবাইকে সাহায্য করার, কিন্তু ইচ্ছাটা অনেক বড়।

এখানে আমি যাদের কথা বলছি, তাদের ভিক্ষুক, ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন কোনো নামই দেয়া যাবে না! কথা বলে দেখেছি, কেউ মাদরাসার শিক্ষক, কেউ এলাকায় ভাড়া বাসায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোচিং করাতো, কেউ বা চায়না, ইন্ডিয়া থেকে যারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে আসে, সেগুলো কালেক্ট করে বিভিন্ন দোকানে ডেলিভারি দিত। মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করে সম্মানের সঙ্গে সংসার চালাতো। নিজেরাও পথে ঘাটে ভিক্ষুকদের সাহায্য করত। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় আজ তার নিজের সংসার চলছে না।

”বলতে পারছে না আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের। কারণ তারাও মোটোমুটি এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা যারা সাহায্য করছি বস্তি এলাকায় বা পথে পথে, এদের কখনোই সে কাতারে শামিল করা যাচ্ছে না। তারা পথে বের হয়ে বলতে পারছে না ‘আমার ৫ বছরের শিশুটি কাঁদছে, ঘরে খাবার নেই’। এমন অনেক পরিবার আছে ঢাকায়, যার ফুডকার্ট থেকে আপনি বসুন্ধরা বা নিউমার্কেটে সুইটকর্ন বা স্মুদি কিনে খেতেন।

কিংবা যাকে দেখেছেন নিউমার্কেট বা গাউসিয়ায় দোকানের বাইরে ফুটপাতে দোকান দিয়ে কম দামি থ্রিপিস, স্যান্ডেল বা বাচ্চাদের চুড়ি ক্লিপ আর টেডিবিয়ার বিক্রি করতে। হয়তো আপনার বেবির আব্দার মেটাতে ১০০-২০০ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকেই কিনে দিয়েছিলেন একদিন একটা টেডিবিয়ার। তার সাথে আপনারও দেখা হয়েছিল মোবাইল ফোনটা সারাতে দিয়ে! তাদের কথা কী আমরা এখনও ভেবেছি! আমরা লকডাউন চেয়েছি বৃহত্তর স্বার্থে, দেশ সমাজকে করোনামুক্ত করতে, সেটা অপরিহার্য দাবি। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই শ্রেণির পেশাজীবীদের কথা ভাববার।

আপনারা অনেকেই বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দিয়েছেন খেতে না পাওয়া জনগোষ্ঠীর মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য। অনেকেই ভাবছেন কিছু করবেন! যাদের সামান্যতম ইচ্ছে আছে এই কাজ করে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য কিছু করার, তাদের আহ্বান জানাচ্ছি, আমার কিছু আইডিয়া আছে, আপনাদেরও থাকতে পারে, প্লিজ আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আসুন মিলেমিশে কিছু করি। যে সময় আজ তাদের এই কষ্টে ফেলেছে সে সময়কে আমরা একসাথে জয় করি।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *