নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ আনসার রোড-শ্রীপুর ও আনসার রোড-বহেরারচালা সড়ক। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত এই সড়কটির কেন্দ্র গড়ে উঠেছে দেশের খ্যাত বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শিল্প-কারখানার ভারী যানবাহন চলার সুবাদে গত কয়েকবছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থা।
জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে সড়কের ওপর থাকা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি নিয়ে। খুঁটি সরাতে পৌরসভা ও বিদ্যুৎবিভাগের মধ্যে চিঠি চালাচালি হলেও কার্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে খুঁটি রেখেই কাজ করেছে শ্রীপুর পৌরসভা। এতে যানবাহন চলাচলের সমস্যার পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।
শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ এই পৌরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আনসার রোড-শ্রীপুর ও আনসার রোড-বহেরারচালা। সড়কটিকে কেন্দ্র করে এর উভয় পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত শিল্পকারখানা। শিল্পকারখানার ভারি যানবাহনের চাপের কারণে গত কয়েকবছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছিল।
জনদুর্ভোগ লাঘবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) বাংলাদেশ মিউনিসিপল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বি.এম.ডি.এফ) এর অর্থায়নে ১১কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যায়ে তিন হাজার ৭০০ মিটার সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর কার্যাদেশ দেয়া হয় জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। পূর্বে সড়কটি সরু থাকায় শিল্পকারখানার ভারি যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। তাই বর্তমানে সড়কটি প্রশস্তকরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা যায় বিদ্যুৎ সরবরাহের খুঁটি।
বর্তমানে প্রায় কিলোমিটার সড়কের ওপর ৪৩টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কোনটি সড়কের দুই থেকে আড়াই ফুট আবার কোনটি তিন ফুটের মধ্যে। এ দিকে সড়ক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতার জন্য সড়কের ওপর বিদ্যমান খুঁটি সরিয়ে দিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে তারা প্রাক্কলণ নির্ধারণ করে পৌরসভার নিকট অর্থ জমা দিতে বলেন। কিন্তু এই অর্থের কোনো ব্যবস্থা পৌরসভার না থাকায় তারা তা দিতে পারেনি। তবে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ও সামনের বর্ষা মৌসুমের কথা বিবেচনা করে খুঁটি রেখেই দ্রুতই কাজ শেষ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামের পর্যটক শাফি কামাল জানান, প্রতিটি কাজের আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। এই সড়কে যা হচ্ছে তা হলো পরিকল্পনাবিহীন কাজ। সরকারের প্রতিটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলেই সড়কে খুঁটি রেখে কাজ করছে পৌরসভা। কাজ শেষে একদিকে পৌরসভা দায় এড়িয়ে যাবে, অন্যদিকে নানা অজুহাত তৈরি করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে খুঁটি রয়েই যাবে। এতে দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানীর আশঙ্কা যেমন থাকবে তেমনি সড়ক প্রশস্তকরণের কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
সড়ক উন্নয়নকে অপরিকল্পিত কাজ আখ্যা দিয়ে সমাজকর্মী মেহেদী হাসান রনী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বহেরার চালা (নতুন বাজার) থেকে আনসার রোড এই সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। আশেপাশে অনেক শিল্পকারখানা থাকায় এবার সময়োপযোগী ঢালাই পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এটা ভালো খবর হলেও সমস্যা ও ঝুঁকি কিন্তু রয়েই গেছে। কারণ রাস্তার দুই পাশে হাঁটার জন্য কোনও জায়গা খালি করা হয়নি। আর বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও সরানো হয়নি। পুরো রাস্তাজুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও তৈরি হলো। এ রকম অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমরা চাই না। আমরা চাই পরিকল্পিত উন্নয়ন। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাত থাকবে। রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকবে না। বিশেষ জায়গাগুলোতে রঙ করা গতিরোধক থাকবে। পথে চলতে গিয়ে সেই পথের মানুষগুলো নিরাপদ থাকবে।
শ্রীপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন জানান, পূর্বেই আমরা সড়কের নির্দিষ্ট জায়গায় খুঁটি স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগকে নিষেধ করেছিলাম, তারা শুনেননি। পৌরসভার সকল রাস্তাঘাটে অপরিকল্পিত ও যাচ্ছেতাইভাবে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করেছে। উন্নয়ন কাজে বর্তমানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বিদ্যুতের খুঁটি। এর ফলে যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা যেমন বাড়ছে তেমনি সড়ক প্রশস্তকরণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
শ্রীপুর পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ৩০ ফুট প্রশস্ত করে সঙ্গে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটির কারণে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়, সাথে প্রশস্ত কমিয়ে ২০ ফুট করা হয়। তবু সড়কে খুঁটি রয়েই যায়। সড়ক থেকে খুঁটি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট আবেদন করলে তারা ২৭৮টি খুঁটি সরানোর জন্য ১ কোটি ১০ লাখ প্রাক্কলণ বাবদ পৌরসভাকে জমা দিতে বলে। কিন্তু এ অর্থ জমা দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা পৌরসভার বর্তমানে নেই। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তুলে নেয়ার জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মাওনা জোনাল অফিসের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক কামাল পাশা জানান, বিধি অনুযায়ী খুঁটি সরানোর জন্য প্রাক্কলণ নির্ধারণ করে পৌরসভাকে অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সে অর্থ এখনও জমা দেয়নি। তবে সড়কের মধ্যে যে খুঁটি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করবে সেসব খুঁটি স্থানান্তরের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।