জুমবাংলা ডেস্ক : অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তিনি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বলা হচ্ছে, গত ৯ মে তিনি কক্সবাজার সফরকালে তাকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি তলব করে।
এবার পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে কক্সবাজার যাওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে দেশে ফিরতে হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সৈয়দ আহমেদ মারুফ তিন দিনের সফরে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছান। বিমানবন্দরের একটি ছবিতে দেখা যায়, সৈয়দ মারুফের সঙ্গে রয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ ও এক নারী। সূত্র জানায়, হাইকমিশনার কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত হোটেল সি-পার্লে ওঠেন। সেখানে সেই নারীসহ সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আজহার মাহমুদ। ৯ মে নিজ গাড়ি করে বন্ধু ও সেই নারীসহ ঘুরে বেড়ান সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ। একই সূত্র বলছে, কক্সবাজারে অবস্থান করা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়েন তারা। তখন তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়েছেন।
কে এই নারী: সূত্র বলছে, সেই নারী ঢাকার ঝিগাতলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। সেখানে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ও তার বন্ধু আজহার মাহমুদের যাতায়াত রয়েছে। এ ছাড়া এ নারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে একাধিক ছবি ছিল, যা এখন আর নেই। জানা যায়, তাদের সফরটি গোপন রাখতে হাইকমিশনার ও তার বন্ধু একসঙ্গে টিকিট কেটেছেন এবং সেই নারী আলাদাভাবে টিকিট কেটে ভ্রমণ করেছেন। এই নারী ২৩তম ব্যাচের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হাফিজা হক শাহ। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগে কর্মরত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাফিজা হক শাহ বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আমার পূর্বপরিচিত। বিভিন্ন সময় তার অনুষ্ঠানেও গিয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার কাজিনদের নিয়ে ব্যক্তিগত ভ্রমণে কক্সবাজার গিয়েছি। রাষ্ট্রদূত তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গিয়েছেন তার মতো করে। আমরা একসঙ্গে যাইনি। কক্সবাজার গিয়ে দেখা হয়েছে।
কক্সবাজারে একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘কক্সবাজার গিয়ে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে হোটেল লবিতে। পূর্বপরিচিত হিসেবে একসঙ্গে কফি খেয়েছি। তখন আরও অনেকেই ছিলেন। এটা তো বড় কিছু নয়। আর একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়টি মিথ্যা।’
হাফিজা হক শাহ বলেন, ‘তা ছাড়া আমি আমার মতো করেই শনিবার বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসি। পাকিস্তানের হাইকমিশনার কবে গেছেন বা কবে ফিরেছেন, তাও আমি জানি না।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমার কোনো অনৈতিক সম্পর্ক নেই; বরং রয়েছে সুসম্পর্ক।’
তবে টিকিটে দেখা যাচ্ছে. পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কক্সবাজারে যাওয়ার টিকিটে নেই পরিবারের লোকজনের নাম। রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদের নাম। এমনকি ঢাকায় ফেরার টিকিটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম।
হঠাৎ কেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার নিজ দেশে: সূত্র বলছে, পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কক্সবাজার ভ্রমণের সময়ই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনের তলবের ভিত্তিতে জরুরিভাবে ঢাকায় ফেরেন সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ। হাইকমিশনারের ভ্রমণ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ হলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। বিষয়টি পাকিস্তান সরকার অবধি পৌঁছায়। পরে তাকে জরুরিভাবে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকমিশনার তার সফরসঙ্গী সেই নারী ও বন্ধু আজহার মাহমুদকে কক্সবাজার ফেলে ঢাকায় ফেরেন।
কক্সবাজারে যাওয়ার টিকিটে রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম, এমনকি ঢাকায় ফেরার ফিরতি টিকিটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম। সেখানে দেখা যায়, তাদের ঢাকায় ফেরত আসার কথা ছিল ১০ মে রাত ৯টায়। কিন্তু আকস্মিকভাবেই নিজের টয়োটা ধূসর রঙের গাড়িতে ঢাকায় আসেন হাইকমিশনার। আর রোববার তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। জানতে চাইলে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরকারি কাজে পাকিস্তানে গেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।