সম্প্রতি এমন এক ধরনের ইয়ারবড বানানোর দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ব্যবহারকারী কখন ঘুমিয়ে পড়তে চলেছেন তা জানাবে।
কাজের ক্ষেত্রে কখনও ঘুমিয়ে পড়েননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটি কেবলই তাদের বিশ্রামের প্রয়োজনের বিষয়টিকে নির্দেশ করে। তবে যারা গাড়ি ও ভারী যন্ত্রপাতি চালান বা পরিচালনা করেন তাদের জন্য হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি বিপজ্জনক, এমনকি মারাত্মকও হতে পারে।
একা একা ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তির গাড়ি চালানোর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর অসংখ্য গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সতর্ক করে বলেছে, নির্মাণ ও খনির মতো বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ক্লান্তির বিষয়টি বিরাট ঝুঁকির।
এ ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’র প্রকৌশলীরা নতুন এক ধরনের ইয়ারবাড তৈরি করেছেন, যেটি ব্যবহারকারীরা কখন ঘুমিয়ে পড়ছেন তা শনাক্ত করবে।
এইসব বিশেষ ধরনের ইয়ারবাডস মস্তিষ্কের কাযকলাপ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়, ঠিক যেমন একটি ইলেক্ট্রোয়েন্সফেলোগ্রাম (ইইজি) কাজ করে। ইইজি এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত পরিমাপ করেন চিকিৎসকরা।
প্রচলিতভাবে একটি ইইজি’র জন্য মাথার ত্বকে বেশ কিছু ইলেক্ট্রোড লাগাতে হয়। তবে এইসব নতুন ধরনের ইয়ারবাড কানের ক্যানেলের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে এমন ‘বিল্ট-ইন’ ইলেক্ট্রোডের সঙ্গে কাজটি করে থাকে।
এ ছাড়াও এইসব ইয়ারবাডস যেসব সংকেত গ্রহণ করে তা একটি আদর্শ ইইজি’র মানের চেয়ে বেশ দুর্বল। গবেষকরা দেখেছেন, ‘ইয়ার ইইজি’ নামের এই নতুন ডিভাইসটি এখনও মস্তিষ্কের কাযকলাপের একটি মাঝারি-ফ্রিকোয়েন্সি প্যাটার্ন ‘আলফা তরঙ্গ’ শনাক্ত করতে যথেষ্ট পারদর্শী নয়।
মানুষ যখন চোখ বন্ধ করে বা ঘুমিয়ে পড়তে শুরু করে তখন মস্তিষ্কের এসব তরঙ্গ সাধারণত দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
২০১৭ সালে নিজের জন্য অ্যাপল এয়ারপডস কেনার পরে এই নতুন ইয়ারবাড তৈরির ধারণাটি প্রথমবারের মতো মাথায় আসে এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ও ইউসি বার্কলে’র সহযোগী অধ্যাপক রিকি মুলারের। তখন থেকেই তিনি মস্তিষ্কের কাযকলাপ রেকর্ড করার জন্য একটি দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।
“আমাদের ধারণা, এই প্রযুক্তির অনেক সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে ঘুমের বিষয়টি শনাক্ত করা কেবল একটি উদাহরণ। কারণ, এটি ঘুম পর্যবেক্ষণ বা ঘুমের রোগ নির্ণয়েও সহায়তা করতে পারে।”
তবে এসব ইয়ারবাডের নকশা করার বিষয়টি সহজ ছিল না। কারণ সঠিকভাবে বোঝার জন্য (রিডিং) কানের ত্বককে ভালভাবে স্পর্শ করতে হবে এসব ইলেক্ট্রোডের। সাধারণত প্রচলিত বিভিন্ন ইইজি করা হয়ে থাকে মাথার ত্বকে আটকে থাকা পাতলা ধাতব ইলেক্ট্রোড দিয়ে।
এমন ধরনের ইয়ারবাড তৈরি করা অনেক কঠিন যেগুলো কানের বিভিন্ন আকারে আরামদায়কভাবে ফিট হবে এবং এরপরও এটি ভালভাবে নিজের কাজ চালিয়ে যাবে।
অন্যান্য গবেষণা দলের করা আগের বিভিন্ন নকশায় ইয়ারবাডের সংযোগ ঘটানোর বিষয়টি উন্নত করতে জেল ব্যবহার বা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কাস্টম ইয়ারপিস তৈরি করা হয়েছিল। তবে মুলারের গবেষণা দলটি এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছে, যা কোনো বিশেষ প্রস্তুতি ছাড়াই যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এজন্য গবেষকরা ইউসি বার্কল-এর অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে ছোট, মাঝারি ও বড় তিনটি আকারে একটি শুষ্ক ও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ইয়ারবাড নকশার কাজ করেন। সবশেষ ডিভাইসটিতে একাধিক ইলেক্ট্রোড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা কানের ক্যানেলে আলতো প্রভাব ফেলবে ও কানে আরামদায়কভাবে ফিট হবে। এজন্য এতে নমনীয় উপাদান ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
এ গবেষণার শেষদিকে গবেষকরা ইয়ারপডের নকশাকে উন্নত ও ডেটা বিশ্লেষণের জন্য এতে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি যোগ করেন।
গবেষকরা নয়জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর এসব ইয়ারবাড পরীক্ষা করে দেখেন। সেচ্ছাসেবীরা একটি অন্ধকার ঘরে একঘেয়ে কাজ করার সময় এই ইয়ারবাড পরেন। ফলে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকদের ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি ইয়ারবাড সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে, এমনকি এ সময় এসব ইয়ারবাডের সিগনালের গুণমানও খুব একটা নিখুঁত ছিল না।
মুলার ও তার গবেষণা দলটি বর্তমানে কানের ইইজি’র জন্য অন্যান্য বিকল্প ব্যবহার খতিয়ে দেখছেন, যা দেহের হৃদস্পন্দন, চোখের চলাচল ও চোয়াল চেপে ধরার মতো সংকেতও তুলতে পারে।
“এসব তারবিহীন ইয়ারবাড আমরা সহজে সবসময় পরতে পারি। আর এ কারণেই এ প্রযুক্তিটিকে এত সম্ভাবনাময়। কারণ, এর জন্য অতিরিক্ত কিছুর প্রয়োজন হয় না,” বলেন মুলার।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।