হঠাৎ মিয়ানমারের শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করেছে ভারত। অন্তত চারটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডিসপ্রোসিয়াম ও টারবিয়ামের মতো দুর্লভ খনিজের বিকল্প উৎস খুঁজছে ভারত। এ কারণেই মূলত ভারত সরকার কেআইএ’র দ্বারস্ত হয়েছে বলে দাবি সূত্রগুলোর।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের খনিজ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত খনিজ কোম্পানি আইআরইএল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালসকে ইতোমধ্যে উত্তর মিয়ানমারের খনি থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহনের সম্ভাবনা যাচাই করতে বলেছে। ওই খনিগুলো কেআইএর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, এসব নমুনা পাওয়ার পর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উন্নত যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজনীয় চুম্বক তৈরির মতো পর্যাপ্ত ভারী দুর্লভ ভৌত পদার্থ মিয়ানমারের খনিতে আছে কিনা, তা ভারতের গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হবে।
গত জুলাইয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ প্রস্তাব তোলে ভারতের খনিজ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে আইআরইএল, মিডওয়েস্টসহ অন্তত আরও একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির সঙ্গে ভারত এমন আলোচনা করে না। সে বিবেচনায় এটি বেশ বিরল উদ্যোগ বলে মনে করছে রয়টার্স।
এদিকে কেআইএর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে খনিজের নমুনা সংগ্রহে কাজ শুরু করেছেন। ভারতে বড় আকারে রপ্তানি সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখতেও সম্মত হয়েছেন তারা।
অবশ্য ভারত সরকার, আইআরইএল, মিডওয়েস্ট কিংবা কেআইএর মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্বজুড়ে দুর্লভ খনিজ পাওয়া গেলেও সেগুলোকে চুম্বকে রূপান্তরের প্রযুক্তি মূলত চীনের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে কৌশলগত চাপ বাড়াতে এ বছর ভারতসহ বড় অর্থনীতিগুলোর জন্য প্রক্রিয়াজাত খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেইজিং।
নিজস্ব খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় এখন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা চাইছে ভারত।
১৯৬১ সালে কাচিন সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গঠিত হয় কেআইএ। জান্তা সরকার ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে গোষ্ঠীটি। গত বছর তারা কাচিন প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনি এলাকা দখল করে, যেখান থেকে বিপুল পরিমাণ দুর্লভ ভারী খনিজ রপ্তানি হতো চীনে।
চীনকে এখন পর্যন্ত খনিজ রপ্তানি করলেও জান্তার সঙ্গে সংঘাত বাড়ায় কেআইএ এখন প্রতিবেশী ভারতের দিকেও ঝুঁকছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদন মতে, খনিজ সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি রুট তৈরি করতে কেআইএর সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহী দিল্লির কর্মকর্তারাও। তবে, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল পেরিয়ে পরিবহন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে এসব খনিজ সড়কপথে সহজেই চীনে পাঠানো যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।