জুমবাংলা ডেস্ক: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লক। এ ব্লকের পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। চাষ করেছেন চাষি মো. ওয়াহিদ মিয়া। তার চাষকৃত ফুল দেখতে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা। এরমধ্যে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ওয়াহিদ মিয়া সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদে লাভবান হয়েছেন।
একই ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের চাষি আজিজুর রহমান, জসিম উদ্দিন, ইউনুছ মিয়া, দিদার হোসেন, দুলাল মিয়া, আমির আলীসহ কয়েকজন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য চাষিরা সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
একইভাবে জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, লাখাই, সদর, মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলার গ্রামে গ্রামে চাষিরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে। তারাও আশানুরূপ ফলন পেলেছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে জেলাজুড়ে প্রায় ৪৫৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে ১৫০০ চাষি। এক সময় শখের বসে কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় সূর্যমুখী ফুল গাছ রোপণ করত সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতো না। এখান কৃষি বিভাগের তৎপরতায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়ে চলেছে। তাতে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। শখ পূরণের পাশিপাশি আসছে অর্থ।
চাষি মো. ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুল চাষ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম মাঠে এসে পরামর্শ দেন। আমি উৎসাহিত হয়ে এ ফুলের চাষ করেছি। ক্ষেতে আছে হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। যে দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমিদের মন জয় করছে। আগামীতেও চাষ করার ইচ্ছা আছে।’
বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘এ ব্লকের মধ্যে প্রায় ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ১০ জন চাষিকে জনপ্রতি ২ কেজি বীজ ও ২০ কেজি করে সার সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। সরকারি সার ও বীজ দিয়ে চাষিদের উৎসাহিত করা হয়েছে। চাষিরা ফুলের চাষ করে লাভবান হয়েছে। চাষিদের মুখে হাসি দেখতে পেয়ে আনন্দ লাগছে।’
বাহুবল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেধা আচার্য্য বলেন, প্রণোদনার মাধ্যমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ হয়েছে। এখানে ৯০ জন চাষির মধ্যে জনপ্রতি ২ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে সহজে উন্নত মানের তেল ও খৈল উৎপাদন হয়। পাশাপাশি পুষ্টিকর সবজি হিসেবেও সূর্যমুখী জনপ্রিয়। তাছাড়া এই ফুলের খেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করা সম্ভব। স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ জীবাণু প্রতিরোধে এই ফুলের উৎপাদিত তেলের চাহিদা রয়েছে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, ‘জেলায় এক সময় সূর্যমুখী ফুল চাষ হতো শখের বসে। উদ্যোগ নিয়ে উপহসকারী কৃষি কর্মকর্তাদের গ্রামে গ্রামে পাঠাই। তারা চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে বীজ ও সার। চাষিরা উৎসাহিত হয়ে সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ করে সফল।’
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও সূর্যমুখী তেলের বোতল দেখা যেত সুপারশপ আর অভিজাত দোকানের তাকে। শহরের অভিজাত শ্রেণি ছিল এই তেলের গ্রাহক। এখন বাড়ির পাশের দোকানেও পাওয়া পাচ্ছে এই তেল। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে রান্নার তালিকায় রাখছেন এই তেল। প্রচলিত তেলের চেয়ে হৃদরোগে ঝুঁকি কমায় পুষ্টিবিদদের এমন পরামর্শেও রান্নার তেল হিসেবে তা জায়গা করে নিচ্ছে। নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়ে বেড়ে যাচ্ছে এই তেলের চাহিদা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।