‘হুইলটা গাছ’ বা হলদু (Haldina cordifolia) হল আমাদের দেশীয় গাছগুলির মধ্যে অন্যতম, যা তার দৃঢ়তা, সুন্দর কাঠের গুণাগুণ এবং সর্বোপরি তার অসাধারণ ঔষধি গুণাগুণের জন্য পরিচিত। কোনো কোনো অঞ্চলে এটি কেলিকদম বা হলুদ কদম নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ ও লোকচিকিৎসায় এই গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

গাছের পরিচিতি ও ঔষধি উপাদান
হুইলটা গাছ একটি বিশাল আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এর প্রধান ঔষধি অংশ হল ছাল (বাকল), তবে পাতা এবং কাঠও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর ছালে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান (যেমন: ট্যানিন, স্যাপোনিন এবং বিভিন্ন অ্যালকালয়েড) রয়েছে যা এটিকে শক্তিশালী নিরাময়কারী ক্ষমতা প্রদান করে।
হুইলটা গাছের প্রধান ঔষধি গুণাগুণ
হুইলটা গাছের বিভিন্ন অংশ নিম্নলিখিত চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়:
১. জ্বর নিরাময় ও অ্যান্টিপাইরেটিক ধর্ম
ব্যবহার: গাছের ছাল ঐতিহ্যগতভাবে জ্বর (বিশেষ করে পালাক্রমে আসা জ্বর) কমাতে ব্যবহৃত হয়। এর তিক্ত স্বাদ এবং শীতলীকরণ বৈশিষ্ট্য শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
কার্যকারিতা: এটি এর অ্যান্টিপাইরেটিক (antipyretic) বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
২. হজম সংক্রান্ত সমস্যা ও আমাশয়
ব্যবহার: ছাল থেকে তৈরি ক্বাথ বা গুঁড়ো ডায়রিয়া (অতিসার) এবং আমাশয় (dysentery) চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।
কার্যকারিতা: এতে থাকা ট্যানিন একটি শক্তিশালী সংকোচক (Astringent) হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং অতিরিক্ত তরল নির্গমন বন্ধ করতে সাহায্য করে।
৩. ক্ষত নিরাময় ও অ্যান্টিসেপটিক
ব্যবহার: গাছের ছাল বা পাতার রস ক্ষত, ফোঁড়া, চর্মরোগ এবং আলসার নিরাময়ের জন্য বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
কার্যকারিতা: এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (জীবাণুনাশক) এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
৪. প্রদাহ বিরোধী (Anti-inflammatory)
ব্যবহার: গাছের ছালের নির্যাস শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রদাহ (inflammation) কমাতে সহায়ক। বাতজনিত ব্যথা এবং ফোলা কমাতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
কার্যকারিতা: আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, এর মধ্যে এমন যৌগ রয়েছে যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী এনজাইমগুলির কার্যকারিতাকে বাধা দিতে পারে।
৫. রক্ত পরিশোধক
ব্যবহার: লোকচিকিৎসায়, হুইলটা গাছের নির্যাসকে রক্ত পরিষ্কারক (Blood Purifier) হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলিও হুইলটা গাছের ঐতিহ্যবাহী ব্যবহারকে সমর্থন করে। দেখা গেছে, এই গাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে শুধুমাত্র লোকজ টোটকা নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: যদিও হুইলটা গাছ প্রচুর ঔষধি গুণাগুণ বহন করে, তবুও এটি মনে রাখা আবশ্যক:
.যেকোনো ভেষজ চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন যোগ্য আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
.নিজের ইচ্ছামতো গাছের ছাল বা অন্যান্য অংশ সংগ্রহ করে ব্যবহার করা উচিত নয়, বিশেষত গর্ভবতী মহিলা এবং ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে।
.হুইলটা গাছ সত্যিই প্রকৃতির এক আশীর্বাদ, যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



