জুমবাংলা ডেস্ক : নিজ দলের নানা কর্মসূচি, আইনি প্রচেষ্টাসহ সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ তখন স্বজনদের আবেদনে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দল এবং স্বজনদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিলো বাত ব্যথায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। ফলে তার পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পরিবারের আবেদনেও ছিলো নিজ দায়িত্বে তার সুচিকিৎসা করানোর প্রতিশ্রুতি।
পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল মুক্ত হন বিএনপি প্রধান। এরপর চলে যান গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খালেদাকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিন তখন তার বাম হাত ঢাকা ছিল হলুদ কাপড়ে।
বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা বলছেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পর হাসপাতাল থেকে গুলশান পর্যন্ত যাওয়ার সময় তার বাম হাতটি হলুদ কাপড়ে ঢাকা ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও এমনটা দেখা গেছে। তারা বলছেন, ডান হাতের তুলনায় বাম হাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই দুই বছরে। বাম হাতটি বাঁকা হয়ে অনেকটা ফুলে গেছে। যে কারণে এটি ঢেকে রাখা হয়েছিলো।
খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বুধবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে বিকাল চারটার পর বের হয়ে পাঁচটার পর গুলশানের বাসায় পৌঁছেন বেগম খালেদা জিয়া। পুরো পথে অসংখ্য নেতাকর্মী তাকে ঘিরে সালাম দেন। এসময় ডান হাত নেড়ে সালামের জবাব দেন তিনি। তবে পুরো সময় বাম হাত নাড়াচাড়া করেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তথ্যমতে, ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তার মূল সমস্যা গেঁটে বাত (অস্টিও-আর্থরাইটিস)। হাসপাতালে তাকে বিশেষ থেরাপি দেওয়ার কথা বলা হলেও তাতে তিনি সম্মতি দেননি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তার মুক্তির জন্য বহুবার আদালতে গেলেও জামিন মঞ্জুর হচ্ছিল না। বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে মিছিল-মানববন্ধন করছিলেন, কিন্তু তাদের নেত্রীর মুক্তির পথ খুলছিল না।
এই অবস্থায় চলতি মাসের শুরুতে ‘মানবিক কারণে’ খালেদার সাময়িক মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। শামীম এবং তার সেজ বোন সেলিমা ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করেছেন বলেও জানা গেছে। এর ২৫ মাস পর মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তাকে তোলা হয় শামীমের গাড়িতে। শামীম নিজেই গাড়ি চালিয়ে রওনা হন ফিরোজার পথে। শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতিমাও ছিলেন ওই গাড়িতে। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। সেখানে ফুল দিয়ে বিএনপিনেত্রীকে স্বাগত জানান স্বজনরা
তার পেছনে অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন খালেদা জিয়ার কারাজীবনের সঙ্গী গৃহকর্মী ফাতেমা। এ সময় খালেদা জিয়ার পরনে ছিল গোলাপী জামা, চোখে সানগ্লাস, আর মুখে মাস্ক। এসময় তার ডান হাত খোলা থাকলেও বাম হাতের কব্জির পুরোটা হলুদ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।
বিকাল সোয়া পাঁচটায় গাড়ি প্রবেশ করে খালেদার বাড়িতে। সেজ বোন সেলিমা ইসলাম, সেলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম, প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার, খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দুসহ পরিবারের সদস্যরা এ সময় ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। সেজ বোন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর হাতে ভর করে গাড়ি থেকে নামেন বিএনপি প্রধান। পরে তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নেওয়া হয় বাড়ির ভেতরে। এসময় তার বাম হাতের হলুদ কাপড় সরে গেলে তা ঢেকে দেয়ার জন্য বলেন খালেদা।
সেখানে উপস্থিত একজন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, ‘ম্যাডামের হাতটা দেখে বিশ্বাসই করতে পারিনি। অমানবিক। দেখলে চোখে পানি চলে আসবে যে কারো। হাতটা বাঁকা হয়ে গেছে। বেশ ফোলাও ছিলো।’
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া বাতের সমস্যা ছাড়া অন্যদিক দিয়ে কিছুটা ভালো শরীর নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন। বুধবার তার ডায়াবেটিস ছিল ৯ দশমিক ৩ এবং উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক ছিল।
ডায়াবেটিকসের চিকিৎসায় দুপুর ও রাতে দুইবেলা ২৪ ও ২২ মিলিগ্রাম ইনসুলিন গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেয়া হয়েছে।
আর আর্থ্রাইটিস রোগের আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত বায়োলজিক্যাল ড্রাগ (ইনজেকশন ও মুখে খাওয়ার ওষুধ) ব্যবহারের জন্য বেগম জিয়ার অনুমতি চাইলেও তিনি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় ওই চিকিৎসা নিতে রাজি হননি। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তার ব্যবস্থাপত্রে ওই বায়োলজিক্যাল ড্রাগ চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।