জুমবাংলা ডেস্ক: মৌসুম শেষ হতে চললেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগামী এক থেকে দেড় মাস আম পাওয়া যাবে। আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে দেশীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের আম চাষ শুরু হয়েছে। এসব আমই ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে জেলার বৃহৎ আমবাজার কানসাটে। এদিকে চলতি মৌসুমে জেলায় আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দুই হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
মৌসুমের শুরুতে গোলাপভোগ, গুটি, ক্ষীরশাপাতি ও ফজলি জাতের আম বেচাকেনা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ফ্রুটব্যাগিংয়ের ফজলি আমসহ আশ্বিনা, হাইব্রিড জাতের বারি-৪ ও কাটিমন জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে বাজারে সীমিত পরিমাণে আম পাওয়া গেলেও এবারের চিত্র অনেকখানি ব্যতিক্রম। এ বছর সার্বিকভাবে আম উৎপাদন কম হলেও আশ্বিনার পাশাপাশি বারি-৪ ও কাটিমন জাতের আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে।
এবার মৌসুমের শুরু থেকেই প্রতিটি জাতের আম গড়ে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি আম তিন হাজার টাকা মণ, গুটি আম দেড় হাজার টাকা মণ ও ফজলি আম আড়াই হাজার টাকা মণ দরে বেচাকেনা হয়েছে। শুরুর দিকে আশ্বিনা আম মণপ্রতি ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকা, বারি-৪ ও কাটিমন আম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বেচাকেনা হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে আশ্বিনা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার, বারি-৪ চার হাজার টাকা ও কাটিমন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার দক্ষিণ শহর এলাকার আমচাষি মুনজের আলম জানান, তাঁর ৮ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম ছিল। এ বছর গাছে মুকুল কম আসায় ফলন কম হয়েছে। তবে প্রথম থেকেই বাজারে আমের ভালো দাম পাওয়ায় তিনি মূলধনের চেয়ে তিন গুণ বেশি লাভ করেছেন।
শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আমচাষি ইসমাঈল খান সামিম জানান, গত বছর তিনি চারটি আমগাছে কলম করে কাটিমনে রূপান্তর করে এ বছরই সেগুলো থেকে লাভের মুখ দেখেছেন। গত বছর কলম ও পরিচর্যার জন্য তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। এর এক বছরের মাথায় তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার টাকা। তাই আরও চার বিঘা বাগান কাটিমনে রূপান্তর করবেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাগানে আশ্বিনা, বারি-৪ ও কাটিমন জাতের আম রয়েছে। এসব আম সিজনের শেষ দিকে বাজারে ওঠায় দামও ভালো পাচ্ছেন।
আমচাষি আব্দুর রহিম বলেন, ‘অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে গাছে ফলন কম হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমের দাম কৃষকদের অনুকূলেই রয়েছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতিকূল আবহাওয়া ও অফ ইয়ারের (এক বছর পরপর যে বছরে আম কম আসে) প্রভাবে গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে ছোট গাছের বাগানগুলো ব্যতিক্রম ছিল। সেগুলোতে আমের ফলন ভালো হয়েছে। অন্যদিকে, আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে চলতি মৌসুমেও আমপাড়া বা বাজারজাতকরণে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন।
ফলে এবার প্রাকৃতিকভাবেই আম পাকার পর বাজারজাত করা শুরু হয়। এতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রথম থেকেই আমের দাম ভালো পাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, চলতি মৌসুমে আম পাড়ার কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। আম পাকলেই চাষিরা বাজারজাত করেছেন। তাই এবার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা দাম ভালো পেয়েছেন। এবার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ লাখ গাছে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে ধারণা করেছে কৃষি বিভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।