তুরস্ক যাওয়ার পর আমার প্রথম দেখতে ইচ্ছে করেছিলো সুলতান সোলেমানের বাড়ি। প্রথমে চোখে পরলো এহমেদ মসজিদ (The Blue Mosque)তারপর সোফিয়া, মনে করেছিলাম এটাই মনে হয় সুলতান সোলেমানের বাড়ি।গুগলের সাহায্য জানলাম এটা গির্জা সোফিয়া, তারপর সোফিয়ার বাম পাসে হেটে প্রাসাদে ঢুকলাম, চিন্তা করলাম জুমার নামাজ পরবো।এহমেদ মসজিদ মুসল্লী পুরন হয়ে গেছে জায়গা নাই। জিজ্ঞাসা করতেই একজন বল্লো সোফিয়ার সংগে লাগানো মসজিদ আছে… দেখলাম গির্জার সংগেই লাগানো ছোট মসজিদ… ছবি ১২/০১/২০১৮
তারপর নিচের সংগ্রিহিত লেখটা পড়ে সোফিয়া সম্পর্কে কিছু জানতে চেস্টা করলাম মাত্র…
ঐতিহাসিক আয়া সুফিয়া বা Hagia shopia গির্জা থেকে মসজিদ, মসজিদ থেকে জাদুঘর, জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু যুগ যুগান্তর ধরে তার মধ্যে এতসব পালাবদল হওয়া সত্ত্বেও, তার ভেতরকার ঐতিহাসিক ইসলামি-উসমানি নিদর্শনের কোনো বদল হয়নি। ঠিক বদল বললে ভুল হবে; বরং বদলানো সম্ভব হয়নি!
আয়া সুফিয়ার ভেতরস্থ দেয়ালে আল্লাহ, মুহাম্মাদ, আবু বাকর, উমর, উসমান, আলি, হাসান, হুসাইন- এসব পুণ্যময় নামে শোভিত রয়েছে কিছু বিশালাকারের ফলক। যুগ যুগ ধরে কত উত্থানপতন বয়ে গেলেও এই ফলকগুলো আজও ইসলামি-উসমানি সভ্যতার নিদর্শন হয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
মুস্তফা ইজ্জত আফেন্দি ছিলেন সুলতান আব্দুল মজিদের আমলে উসমানি খিলাফতের একজন নামকরা উস্তাদ। পাশাপাশি তিনি ছিলেন আয়া সুফিয়া জামে মসজিদের দ্বিতীয় ইমাম। তিনিই এই ফলকগুলোতে নামলিপি করিয়ে আয়া সুফিয়ার দেয়ালে লটকিয়ে মসজিদের শোভাবর্ধন করেন।
ফলকগুলো ৭.৫ মিটার লম্বা। সবুজ রঙয়ের। স্পষ্ট আরবি অক্ষরে তিনিই এই নামলিপি করান। জেজপান প্রজাতির কাঠে, খোদাই করে এই নামলিপি করা হয়। এরপর মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে শক্ত করে লাগিয়ে দেওয়া হয় যে, যেকারও পক্ষে এগুলো সরানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
১৯৩৪ সালে বেইমান মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক তার পশ্চিমা প্রভুদের নেমকহালালি করতে গিয়ে আয়া সুফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। তখন দায়িত্বশীল কর্মচারীরা এসব ফলক খুলে, স্থানান্তরিত করে, পার্শ্ববর্তী সুলতান আহমদ জামে মসজিদে স্থাপন করতে চাইলেন।
কিন্তু এই হীন ইচ্ছা চরিতার্থ হয়নি। কারণ, মুস্তফা ইজ্জত আফেন্দির তৈরি এই ফলকগুলো ছিল বেশ বড়। এমনকী আয়া সুফিয়ার প্রধান ফটক দিয়েও এগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। ব্যর্থ হয় কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র।
কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বসে থাকেননি। এসব ফলক সহজে স্থানান্তরিত করা সম্ভব না হওয়ার কারণে তারা এগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্মচারীরা সেই স্পর্ধা দেখাতে পারেনি। ভয় পেয়ে যান তারা। ফলকগুলোকে তারা এভাবেই মেঝেতে ফেলে রাখেন। প্রায় ১৫ বছর অবহেলিতভাবে পড়ে থাকার কারণে ফলকগুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায়।
এরপর বিগত চল্লিশের দশকে ফলকগুলোর বেহাল দশা অবলোকন করেন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক সামাবিয়াহ আইয়াজাহ। তিনি আয়া সুফিয়া জাদুঘরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন করে বলেন, এই ফলকগুলো নষ্ট হয়ে গেলে, তোমাদেরকে অচিরেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যতদ্রুত সম্ভব, তোমাদের ওপর অপরিহার্য হলো, ফলকগুলোকে যথাস্থানে লাগিয়ে রাখা।
সেই হিসেবে ১৯৪৯ সালের ২ রা জানুয়ারি, দীর্ঘদিনের অবহেলা, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার পর আবারও আয়া সুফিয়ার দেয়ালে লটকিয়ে দেওয়া হয়। ফলকগুলো ফিরে পায় আগের মহত্ব ও শোভাসৌন্দর্য।
যাইহোক, অবশেষে আজ এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে আবারও আয়া সুফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। নিশ্চয় এটি প্রেসিডেন্ট ফজব তাইয়েব এরদোগানের যুগান্তকারী অবদান। নিশ্চয় আল্লাহও তাঁকে এর উত্তম বদলা দান করবেন।
পুনশ্চ : আল্লাহ এভাবেই তাঁর নাম এবং তাঁর প্রিয়দের নামগুলোর মর্যাদা সমুন্নত রাখেন। পদদলিত হতে দেননা এভাবেই তিনি তাঁর আলো জ্বালিয়ে রাখেন, যদিও অবিশ্বাসীরা তা এক ফুঁকে নিভিয়ে দিতে চায়!
পুন : পুনশ্চ : ইতিহাস! জানি, তোমার পুনরাবৃত্তি হয়। আজকের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ লিখে রাখো তোমার কালের পাতায়…!
সূত্র : ০১-০৭-২০২০ তারিখে তুর্কপ্রেস ডট কম-এ প্রকাশিত হাসনাহ জুখদার এর লিখিত আর্টিকেল অবলম্বনে।
উস্তায Ainul Haque Qasimi
Samir ahmed solim থেকে কপি পেষ্ট করা
নিচের লেখাটা বিবিসি বাংলা থেকে থেকে নেয়া। প্রকাশ ১১/০৭/২০২০
হাইয়া সোফিয়ার ইতিহাস:
হাইয়া সোফিয়ার ইতিহাসের সূচনা ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে যখন বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইস্তাম্বুলের গোল্ডেন হর্ন নামে এক জায়গায় একটি বিশাল গির্জা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
সে সময় বিশাল গম্বুজের এই গির্জাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা এবং দালান বলে মনে করা হতো।
১২০৪ সালে ক্রসেডারদের হামলার ঘটনা বাদে কয়েক শতাব্দী ধরে হাইয়া সোফিয়া বাইজান্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
অটোমান (ওসমান) বংশীয় সুলতান তৃতীয় মেহ্মেদ ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন শাসকদের হাত থেকে ইস্তাম্বুল দখল করে নেন। তার আগ পর্যন্ত শহরটির নাম ছিল কনস্টান্টিনোপল।
ইস্তাম্বুল দখলের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী প্রথমবারের মতো গির্জার ভেতরে নামাজ আদায় করে।
১৯৩৪ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করার প্রক্রিয়ায় মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
হাইয়া সোফিয়া এখন তুরস্কের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান বলে স্বীকৃত। প্রতিবছর ৩৭ লক্ষ পর্যটক এটি দেখতে আসেন।
লেখাটি সেয়দ শহীদ এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।