জুমবাংলা ডেস্ক : সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ঝুলে গেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। এ সিন্ডিকেটের হোতা বলা হয়ে থাকে বেস্টিনেটকে। ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে দেদারছে চলছে প্রতিষ্ঠানটির অপতৎপরতা।
সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে মালয়েশিয়ান কোম্পানি বেস্টিনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে বায়রা সদস্যরা। এ অপকমের্র নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো শ্রী আমিন ও তার বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার রুহুল আমিন স্বপন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকা দিয়ে সিন্ডিকেট করার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই অডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নাম ভাঙিয়ে বলা হয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২৫ লাইসেন্স এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এই ২৫ লাইসেন্সের মালিকদের একজন অপর একজনকে এমন কথা বলে আশ্বস্ত করেছেন।
মেসার্স সরকার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী সরকারের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। মোহাম্মাদ আলী সরকারের কোম্পানি আরএল নম্বর ১৭১৫।
অডিও কথোপকথনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তাদের সিন্ডিকেটই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাবে। তার এ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন বায়রা নেতারা।
গত ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে তদবির, অবৈধভাবে সরকারি কাজ ও সুবিধা পাওয়ার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সব সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে অধীন দপ্তরগুলোকে সতর্ক করছে মন্ত্রণালয়গুলো।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের সিন্ডিকেট সদস্যের এই অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলো।
অডিও ক্লিপের একটি কপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ বিষয়ে মেসার্স সরকার ইন্টারন্যাশলালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল একটি অডিও ক্লিপ আপনার বলে প্রচার হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক মতিন সাহেব এই অডিও ক্লিপ ভাইরাল করেছেন।’
মোহাম্মদ আলী সরকার আরও বলেন, ‘যার সাথে বলা হয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করুন! কে কথা বলেছে?’ তিনি এমন কথা বলেননি বলেও দাবি করেন।
কী আছে ভাইরাল অডিও ক্লিপে :
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের দৈর্ঘ্য ২ মিনিটি ৩৪ সেকেন্ড। অডিওর এক প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ‘এগুলো থাক বা না থাক কাজ হয়ে গেছে। ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা কর বসে থাকো। এগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দাও। টোটাল্লি বাদ দাও। এগুলো থাকবে না থাকবে, ২৫টির কাজ হয়ে গেছে। অ্যাপ্রুভাল দিয়ে গেছে, এটেস্টেড দিয়েছে। মানুষ পাগল আসলেই। মানুষের মাথা মনে হয় নষ্ট। অ্যাপ্রুভাল দিয়ে গেছে ২৫টি লাইসেন্সের নাম উল্লেখ করে। প্রত্যেকটা লাইসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাইছে। আমরা পাইছি, সবাই পাইছে, সবাই সবাই পাইছে অ্যাপ্রুভাল। এরপর কি আবার নাম থাকা লাগে ওয়েবসাইটে? ওয়েবসাইটে থাকবে না থাকবে, নেটে সমস্যা হবে, সফটওয়্যারে থাকবে, থাকবে না, সফটওয়্যার থেকে আউট হয়ে যাবে। সমস্যা কী? এটা নিয়ে কি আছে? এটা নিয়ে কথা বলার যুক্তি আছে? তুমি আমার কথাটা ফরওয়ার্ড করে দিও।’
‘ঠিক আছে? কাজ কনফর্ম হয়ে আছে। ২৫টি লাইসেন্স, ২৫টিই লাইসেন্স। ২৬টি লাইসেন্স হবে না। এটা তোমাদেরকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত বলছি। শুনতে হবে। হাজার কোটি টাকা দিয়ে এটাকে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। একশ কোটি টাকা না, হাজার কোটি টাকা। ঠিক আছে?’
‘একটা সিন্ডিকেটে কত শত টাকা দিছে, যেটা শুনলে তোমার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি বোঝ না? মালয়েশিয়ান গভর্মেন্ট ২৫টি লাইসেন্সকে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত করছে এবং মালয়শিয়ান মন্ত্রী নিজের মুখ দিয়ে বক্তৃতায় বলছে। তার মানে কী? তার মানে কত শত কোটি টাকা তারা খাইছে, দাতো শ্রী আমিন সহকারে। টাকার বিনিময় তো হইছে এবং লবিংয়ের বিনিময়ে হইছে। কথা বোঝ না? এটাকে ক্লিয়ার করতে হবে। এটা কনফর্ম।’
‘আর একটা কথা তোমাকে না বললেই নয়, সিন্ডিকেট এমন একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যেটা শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবা। এর পেছনে কারা আছে, কারা ইন্ধন দিচ্ছে এটা টোটালি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। আর কী বলব? আর কিছু বলার আছে? এসব বগা- ছগা নোমান ওই যে টিপু, তারপর ওর নাম কী জানি ওই যে, বাশার—এগুলো দালাল, টাউট, বাটপার।’
‘আমি সিন্ডিকেট করছি, এখন আর সিন্ডিকেট ভালো লাগে না। এখন লাত্থে বার করে দিয়েছি তো, তাই এখন আর সিন্ডিকেট ভালো লাগে না। বাদ দাও এসব কথা, একদম বাদ দাও। পারলে প্রতিদিন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়িও, তাহাজ্জুতের নামাজ পড়িও, কাজে লাগবে। এগুলো মাথা থেকে একদম ফেলে দাও। ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করো। মন্ত্রী বাংলাদেশে আসলে ইনশাআল্লাহ ঘোষণাটা দেবে। ঘোষণাটা এখন দিতে পারছে না। কারণ মিটিং ছাড়া সে কীভাবে ঘোষণা দেবে? এটা তার একটা প্রেস্টিজের বিষয়। মিটিং বারবার চাচ্ছে। এ জন্য মূলত মিটিংটা। ঠিক আছে? এখন দেখো মালয়েশিয়ার চিঠিটা আসবে হয়তোবা এ সপ্তাহে আমরা চিঠিটা পামু। কবে মিটিং? হয়তোবা এমনও হতে পারে, দুই তিন দিন আগেও হতে পারে বা দুই দিন পরেও হতে পারে। কাজ কনফার্ম। কথা বুঝছ? ভালো থাকো, ওকে।’
বায়রার সাবেক নেতারা বলছেন, মালায়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট করার সহযোগী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নাম উল্লেখ করে তথাকথিত সিন্ডিকেটের একজন সদস্যের ভয়েস মেসেজ অবাক করেছে। এই ভয়েসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জড়ানোর বিষয়ে আশা করি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই সঙ্গে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়েও থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।
তারা আরও বলেন, ২৫ লাইসেন্সের এই ব্যক্তি খুব অফেনসিভ কথা বলেছেন, যা বাংলাদেশ সরকারের অস্তিত্ব বিলীন করার মতো। এত বড় সাহস উনাকে কে দিয়াছে? ভয়েজ দেওয়া এই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি।
তারা বলেন, মালয়েশিয়ায় কোন সিস্টেমে কাজ হবে, সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মেনে নিয়ে শ্রমিক পাঠাব। কিন্তু এসব ব্যক্তিদের কারণে সব আসা-ভরসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
বায়রার সাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ভাঙিয়ে যারা হীন কাজে লিপ্ত হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘যে ভয়েস রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে, তা সিন্ডিকেট-চক্রান্তকারীদের কথোপকথন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ, দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গানো নিশ্চয়ই বড় অপরাধ।’
বায়রার সাবেক অর্থসচিব আরও বলেন, ‘ভয়েস রেকর্ড যদি সত্য হয়, তাহলে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হবে। ভয়েসে বলা হয়েছে, হাজার কোটি টাকার বিনময়ে সিন্ডিকেট হয়েছে। এই দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এভাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতিবাজরা লাগাতারভাবে দুর্নীতি করতে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নাম ব্যবহার করে তদবির বন্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে তদবির, অবৈধভাবে সরকারি কাজ ও সুবিধা পাওয়ার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সব সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে অধীন দপ্তরগুলোকে সতর্ক করছে মন্ত্রণালয়।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানদের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে সরকারি কাজ এবং অনুরূপ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে অনেকে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
সবাইকে জানানো যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্য কোনো প্রকার ব্যবসা বা অনুরূপ কোনো তদবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণার চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কোনো অনুরোধ বা তদবির বা অবৈধ সুবিধাভোগের চেষ্টা চোখে পড়লে প্রতারকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও একান্ত সচিব-২ মনিরা বেগম এবং সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদের কাছে তথ্য দিতে বলা হয় ওই চিঠিতে। সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।