জুমবাংলা ডেস্ক : জান্নাতুল বাকি পবিত্র মদিনার একটি বিখ্যাত কবরস্থানের নাম। এ কবর স্থানটি মসজিদে নববীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। কিন্তু কোনো কবর চিহ্নিত নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য স্ত্রী, কন্যা, ছেলে ও অন্য আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে হাজার হাজার সাহাবির কবর রয়েছে জান্নাতুল বাকিতে। ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে জান্নাতুল বাকিতে প্রায় দশ হাজার সাহাবির কবর রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই শেষ রাতে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং দোয়া করতেন। দোয়ায় নবী করিম (সা.) বাকি কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। কবর জিয়ারত করা প্রত্যেক স্থানেই শরিয়তসম্মত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেবে।’
কবরস্থানের সূচনা
জান্নাতুল বাকির সূচনা হয় নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র হাতেই। তাঁর দুধভাই উসমান ইবনে মাজউন (রা.) মারা গেলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘তাকে কোথায় দাফন করা হবে?’ তিনি বলেন, ‘আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে বাকিউল গারকাদে দাফন করার জন্য।’ (মুসতাদরাকে হাকিম : ১১/১৯৩)
তাই বলা যায়, কবরস্থানের জন্য জায়গাটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্বাচিত। সর্বপ্রথম উসমান ইবনে মাজউন (রা.)-কে দাফন করা হয়। তারপর কবরস্থান তিন দিকেই প্রশস্ত হতে থাকে। আর আজ তা বিশাল জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।
জান্নাতুল বাকিতে সমাহিত ব্যক্তির বিশেষ মর্যাদা
বরকতময় এই কবরস্থানে সমাহিত ব্যক্তির সৌভাগ্য বোঝার জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে মৃতদের দাফনের জায়গাটি স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্বাচন করেছেন। এ ছাড়া হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির জমিনে চিড় ধরবে, সেই ব্যক্তি আমি। তারপর আবু বকর (রা.), তারপর ওমর (রা.), তারপর আহলে বাকি। আমি আহলে বাকির পাশে থাকব। তারা আমার সঙ্গে একত্র হবে। তারপর আমি মক্কাবাসীর জন্য অপেক্ষা করব। তারা মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি জায়গায় এসে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। (সুনানে তিরিমজি, হাদিস : ৩৬২৫)
জান্নাতুল বাকিতে ঘুমিয়ে আছেন যাঁরা
জান্নাতুল বাকিতে কবরস্থ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন—নবীকন্যা ফাতেমা (রা.), তৃতীয় খলিফা ও রাসুলের জামাতা উসমান (রা.), উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.), নবীজির চাচা আব্বাস (রা.), নবীপুত্র ইবরাহিম (রা.), নবীদৌহিত্র হাসান (রা.), উসমান ইবনে মাজউন (রা.), নবীকন্যা রোকাইয়া (রা.), খলিফা আলী (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), নবীজির দুধমা হালিমা সাদিয়া (রা.) প্রমুখ।
মদিনায় অবস্থানরত হজ পালনকারীদের মৃত্যু হলে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেই সঙ্গে মদিনাবাসী এখানে দাফনের সুযোগ পান। এখনো প্রতিদিন এখানে মরদেহ দাফন করা হয়। তবে বাকি কবরস্থানের সম্মুখভাগে এখন আর নতুন করে কাউকে কবর দেওয়া হয় না। কারণ এ অংশেই রয়েছে সাহাবাদের কবর।
জান্নাতুল বাকিতে দাফনকৃত মৃতের সংখ্যা
ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে, জান্নাতুল বাকিতে প্রায় ১০ হাজার সাহাবার কবর রয়েছে। কিন্তু কোনো কবর চিহ্নিত নয়। নবী করিম (সা.)-এর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য থেকে শুরু করে সাহাবা, পীর-আউলিয়া, বুজুর্গ এবং অসংখ্য মুসলমানের কবর রয়েছে জান্নাতুল বাকিতে।
জিয়ারতের সময়
জিয়ারতের জন্য ফজর ও আসরের নামাজের পর জান্নাতুল বাকি খুলে দেওয়া হয়। ফজরের পর তিন ঘণ্টা, আসরের পর এক ঘণ্টা। বিশাল আয়তনের জান্নাতুল বাকির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরাও যথেষ্ট আন্তরিক। সূত্র : গুগল থেকে সংগৃহীত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।