জুমবাংলা ডেস্ক : পৌষের শেষ প্রান্তে এসেও তাপমাত্রা ওঠা-নামার মধ্যেই আছে। ডিসেম্বরের শেষে শীতের অনুভূতি অনেকটা কম থাকলেও জানুয়ারির শুরুতে আচমকা শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। গত সপ্তাহের শেষ দিকে রংপুর বিভাগের সব জেলাসহ দেশের ১৩টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। মাঝে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছিল। সারা দেশে আবারও শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা কমতে থাকায় বাড়ছে কুয়াশা, যার দাপট দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এবার দেশজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত পড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে যাবে। আগামী দুইদিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি কমতে পারে। তবে শনিবার থেকে আবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়বে।
শীতের তীব্রতা যে আসছে তা টের পাওয়া গেছে বুধবার সকাল থেকে। হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার ঘেরাটোপে শুরু হয় সকাল। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় কুয়াশা কেটে রোদের দেখা মিলেছে দুপুরের পর। দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা থাকায় শীতের অনুভূতি বেড়েছে। বুধবার দেশের সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল যশোরে। আর সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সীতাকুণ্ডে। এ সময় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সপ্তাহের শুরুতে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল।
বুধবার রাজধানীতে কুয়াশার ঘনত্ব আগেরদিনের তুলনায় বেশি ছিল। দুপুরের পর স্বল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলেছে। এদিকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগেও গত দুই দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশের ওপরে রয়েছে। এই দুই বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আছে। তবে আগামী দুই দিন উত্তরের তাপমাত্রা কমে ক্রমশ তা দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা ও যশোরের দিকে ছড়াতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার অবস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আর মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীন নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের তাপমাত্রা সামান্য অর্থাৎ ২ থেকে ৪ ডিগ্রি কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার একই অবস্থা থাকবে। তবে এরপর তাপমাত্রা খুব বেশি কমবে না, বরং একটু বাড়বে। অঞ্চলভেদে দু-এক জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। তবে সেটির ব্যাপ্তি কম থাকবে।
হঠাৎ কুয়াশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দূষিত বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে রয়েছে, যা মেঘ ও কুয়াশা তৈরিতে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল আট থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন কুয়াশার কারণে সেটি কমে আসছে। এর ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, বুধবার রাত থেকে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে, যা পরবর্তী দুই-তিন দিন পর্যন্ত চলতে পারে। তবে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে পারে। এর কয়েকদিন পর জানুয়ারির শেষ দশদিনে আরও এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।
আবহাওয়ার জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের আভাস আছে। অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে একটি থেকে তিনটি; আর এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশজুড়ে। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গায় শীত বেশি অনুভূত হতে পারে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে, শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। তাপমাত্রা কমায় যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।