জুমবাংলা ডেস্ক : পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী কাদের বলবেন? নিশ্চয়ই হাতি-কিংবা গণ্ডারের কথা বলবেন। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ডাইনোসর, তিমি কিংবা হাঙরের কথা। সার্বিক শক্তিতে হয়তো এদেরকে শক্তিশালী বলতেই পারেন। কিন্তু শক্তির হিসাবের জন্য তো আরো অনেক মাপ আছে।
আকারে বড় হলে সবচেয়ে বড় হওয়া যায়, হয়তো মোট শক্তির বিচারে তাকে শক্তিশালীও বলা যায়। কিন্তু ভার বহন ক্ষমতা দিয়ে বিচার করলে হাতি কিংবা গণ্ডার এক জাতের পোকার কাছে নস্যি।
ভার বহনের ক্ষেত্রে ঘোড়াকে আদর্শ মানা হয়। তবে ঘোড়ার চেয়ে বেশি ভার বহন করতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
একটি ঘোড়া যেখানে নিজের ওজনের ২০-২৫ শতাংশ ভার বহন করতে পারে, সেখানে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিজের চেয়ে প্রায় তিন গুণ ওজনের প্রাণীকে বয়ে নিতে পারে। অবশ্যই সেটা কামড়ে ধেরে, পিঠে বহন করে নয়।
অনেকেই হয়তো বুঝে ফেলেছেন, আমি কী বলতে চাচ্ছি। ভার বহনই যদি শক্তিমত্তার মানদণ্ড হয়, তাহলে আমাদের কীটপতঙ্গের জগতে হাত বাড়াতে হবে।
এখন নিশ্চয়ই অনেকে পিঁপড়ের কথা বলবেন। গুগলে সার্চ করলে দেখা যাবে, কোনো কোনো পিঁপড়ে তার নিজের ওজনের পাঁচ হাজার গুণ ভারী জিনিস বহন করতে পারে।
তবে এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই পিঁপড়েদের এক পাশে সরিয়ে রেখেই আমরা আরেকটা প্রাণীকে প্রচণ্ড শক্তিশালী বলতে পারি। সেটা হচ্ছে বিটল বা গোবরে পোকা।
বেশির ভাগ বিটলই অবিশ্বাস্য রকম ভারবাহী। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে এ রাইনেসরাস বিটল বা গণ্ডার গুবরে।
ভার বহনের কথা বলার আগে এদেরকে কেন গণ্ডারের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, সে কথা বলে নিই। এই গণ্ডারের সামনের দিকে একটা অ্যান্টেনা বা শুঁড় আছে, যেটা দেখতে গণ্ডারের নাকের ওপর থাকা শিংয়ের মতোই। চেহারাখানাও গণ্ডারের মতো দশাসই। সব মিলিয়ে গণ্ডারের সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে এই গুবরে পোকার। তবে ভার বহনের ক্ষেত্রে গণ্ডারের চেয়ে এই পোকা অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী।
গণ্ডার কতটা ভার বহন করতে পারে, তার সঠিক তথ্য নেই। কারণ বাঘের মতো প্রাণীদের শিকার করে বহনের ব্যাপারটা থাকে। গণ্ডার তৃণভোজী প্রাণী, তাদের ভার বহনের দরকার হয় না। আবার হাতির মতো গণ্ডারকে পোষা হয় না বলে আদৌ কতটুকু ভার সে বইতে পারে তার পরীক্ষা হয়নি।
কিন্তু গুবরে পোকাদের ভার বহন করতে হয়। বড় বড় ময়লার বল তৈরি করে অনায়াসে সেটা ঠেলে বা টেনে নিয়ে যায়। তবে ঠেলা বা টানা দিয়ে ভার বহনের আসল ক্ষমতাটা বোঝা যায়ে না। সেটা বুঝতে হলে অবশ্য পিঠে চাপিয়ে দেখতে হবে কতটুকু সেই বইতে পারে। Xylorctes thestalus নামের এক প্রজাতির রানোসরেস বিটলকে দিয়ে এ কাজটিই করিয়েছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী রজার ক্র্যাম। কারণ তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। এই পরীক্ষার অনেক আগেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছিল এই গুবরে পোকা। সেখানে অবশ্য বলা হয়েছিল, এই পোকারা নিজের ওজনের সাড়ে আট শ গুণ ভারী জিনিস বহন করতে পারে। ক্রেমার সেই দাবির সত্যত্যা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। তাই করেছিলেন পরীক্ষা।
তিনি প্রথমেই এই বিটলের পিঠে আঠা দিয়ে লাগান এক টুকরো ভেলক্রো টেপ। ভেলক্রোর ওপর আটকে দিলেন ছোট ছোট সিসার বাটখারা।
তিনি দেখলেন এই বিটলগুলো প্রায় ২০০ গ্রাম ভার বইতে পারে নিজের পিঠে।
বলবেন হয়তো, ২০০গ্রাম এমন আর কী?
তাহলে বলি, এই বিটল দেখতে যত ভয়ংকরই হোক ওজনে মাত্র দুই গ্রাম। এতটুকু এত হালকা একটা প্রাণী কিভাবে নিজের ওজনের প্রায় ১০০ গুণ ভার বইতে পারছে, এটা বিস্ময়কর। অলিম্পিকে যাঁরা ভারোত্তোলন করেন তাঁরা নিজের ওজনের কয়েক গুণ ওজন উঁচু করতে পারেন। কিন্তু এর জন্যও কত প্রস্তুতি আর কত হ্যাপা। তাঁকে যদি বলা হয় একটা আস্ত হাতিকে পিঠের ওপর বয়ে নিতে হবে, তাহলে পারবেন?
অসম্ভব। অথচ এই অসম্ভব কাজটা অবলীলায় করতে পারে বিটলরা। রাইনোসরেস বিটলের মতো সব বিটলই হয়তো নিজের ওজনের ১০০ গুণ ভার বহন করতে পারে না, তবে নিজের ওজনের ২০/৩০/৫০ গুণ ভার যেকোনো গুবরে পোকাই বইতে পারে।
অলিম্পিকে গিয়ে যদি এই বিটল মেডেল দাবি করে, তাহলে মনে হয় নিজেদের মান বাঁচাতেই সেটা দিয়ে দেওয়া উচিত।
সূত্র:
১. ন্যাশনাল ওয়াইল্ড লাইফ ফাউন্ডেশন
২. ছলনার আট পা ও অন্যান্য/যুধাজিৎ দাশগুপ্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।