ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এরপর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। সেইখানেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি।
এদিকে, হাদিকে কারা গুলি করেছে-দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয়সহ পুরো ঘটনার পূর্বাপর সম্ভাব্য সব তথ্যই যাচাই করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যা চেষ্টার কয়েক ঘণ্টা আগে কিংবা দুয়েকদিন আগে ছদ্মবেশে হাদির সঙ্গে মোটরসাইকেলে থেকে গুলি করা দুই যুবক গোপনে চলাফেরা করেছিল কিনা, তাও তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হাদির সঙ্গে থাকা দুই যুবকের কয়েকটি ছবি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছবিতে থাকা ওই দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে গুলি করেছে কিনা তা নিয়ে ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে এবং প্রতিটি সূত্র ধরে তদন্ত আরও এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিন দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে আরেকজনের সঙ্গে অটোরিকশায় থাকা অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে মোটরসাইকেলে করে আসা দুই যুবক খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়।পরে গুলিবিদ্ধ হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথায় সিটি স্ক্যান করিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তাক জানান, নিউরো বিভাগের অভিজ্ঞ সিনিয়র চিকিৎসকরা গুলিবিদ্ধ হাদির অস্ত্রোপচার করেছেন। এর আগে তার সিটি স্ক্যান করা হয়, যেখানে দেখা যায়, মস্তিষ্কে ছোট ছোট কয়েকটি পিলেট বা ক্ষুদ্র ধাতব বল রয়েছে। অস্ত্রোপচারের সময় একটি পিলেট বের করা হয়েছে, আর দুয়েকটি এখনো মস্তিষ্কে রয়ে গেছে।
রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ওসমান হাদিকে মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে পালিয়ে যাওয়া সেই সন্ত্রাসীদের ধরতে ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি নিজেও এ কাজে ব্যস্ত আছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো কিছু ছবিতে দেখা গেছে, দুপুরে মতিঝিল ওয়াপদা মাদ্রাসা (জামিআ দারুল উলুম মতিঝিল) এলাকায় হাদির সঙ্গে জনসংযোগে অংশ নেওয়া দুই ব্যক্তির সঙ্গে গুলি চালানো দুই হামলাকারীর সঙ্গে পোশাকে মিল রয়েছে। গুলিকারীদের একজনের গায়ে ছিল কালো পাঞ্জাবি, কালো মাস্ক, গলায় চাদর এবং আকাশি রঙের প্যান্ট। অন্যজনের পরণে ছিল কালো ব্লেজার, কালো মাস্ক, চোখে চশমা এবং পায়ে চামড়ার রঙের জুতা। হামলাকারীদের পোশাকের সঙ্গে জনসংযোগে থাকা ওই দুজনের পোশাকের সাদৃশ্য উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরে ডিবি প্রধান বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে কারা গুলি করেছে, এ বিষয়ে দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয়সহ পুরো ঘটনার আগে–পরে সম্ভাব্য সব তথ্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যা চেষ্টার কয়েক ঘণ্টা আগে কিংবা ১–২ দিন আগে ওই দুই যুবক হাদির সঙ্গে মোটরসাইকেলে থেকে চলাফেরা করেছিল কিনা, সেটিও তদন্তের আওতায় রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগ, র্যাবসহ সব সংস্থা দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



