জুমবাংলা ডেস্ক : হাসলে মন ভালো থাকে। অনেকে তো আবার এতটাই হাসেন যে, হাসতে হাসতে তাদের পেট ফাটিয়ে ফেলেন! অনেকেই আবার বলেন, যারা হাসতে জানে না, তারা যেন এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে জানে না। এমন অসংখ্য কথা রয়েছে এই হাসি নিয়ে। শরীরের পক্ষে হাসি ভাল। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হার্ট ভাল থাকে, গোটা শরীর রিলাক্স থাকে। কিন্তু জানেন কি, অত্যধিক হাসি কখনো বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে? হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন।
হাসতে হাসতে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভর্তি
এই তো দু’দিন আগেই শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক যখন পাঠদানে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাসাহাসি শুরু হয়। এরপর হাসতে হাসতে অসুস্থ হন একের পর এক ২৫ শিক্ষার্থী। তাৎক্ষণিক তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের ভাষায়, এটি একটি মানসিক রোগ। প্রথমে কয়েকজনের মধ্যে প্রথমে রোগটি দেখা দিলেও পরে বাকি শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুধু বাংলাদেশেই যে প্রথম এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয় পড়েছে এমন কিন্তু নয়। মাত্রাতিরিক্ত হাসির ফলে এই পৃথিবীতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তেমনই কয়েকজন সম্পর্কে জেনে নিন-
১. জিউক্সিস হেরাক্লা
এই চিত্রশিল্পী নিজের আঁকানো ছবি দেখেই হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৫ বিসিতে গ্রিকের একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। তারা প্রেইন্টিংয়ে প্রাধান্য পেতো নগ্নতা। জিউক্সিস বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হেলেনকে চিত্রিত করার চেষ্টায় রাত দিন মগ্ন থাকতেন। কিন্তু তার মত কোনো নারীকেই সে খুঁজে পেল না। পরবর্তীতে, তিনি তার ছবির জন্য ৫ নারীকে মডেল করার সিদ্ধান্ত নেন। দুর্ভাগ্যবশত, তার সেই পেইন্টিংটি এখন নেই।
একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা তাকে ভালবাসা, সৌন্দর্য এবং আনন্দের দেবী আফ্রোদিতির ছবি এঁকে দিতে বলেন। বৃদ্ধা এরপর জিউক্সিসকে কিছু নির্দেশনাও দিয়ে দেন চিত্রকর্মটি কেমন হবে সে ব্যাপারে। এমনকি বৃদ্ধা নিজেই মডেলিং করেও দেখিয়ে দিয়েছিলেন আফ্রোদিতিকে ঠিক কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে চিত্রকর্মটিতে। চিত্রকর্মটি সম্পন্ন হবার পরে জিউক্সিস যখন নিজের আঁকা ছবিটি দেখলেন তখন তার সেই বৃদ্ধার কথা মনে পরে গেলো। আফ্রোদিতির রূপে বৃদ্ধাটিকে কল্পনা করে তিনি যারপরনাই হাসিতে ফেটে পড়লেন। সেই হাসি এতটাই প্রবল ছিল যে তিনি একসময় তাতেই মৃত্যুবরণ করেন। যদিও জিউক্সিসের সেই চিত্রকর্মটির অস্তিত্ব আর নেই, তবুও তার মৃত্যুর এই বিখ্যাত কাহিনি এখনো প্রচলিত রয়েছে সবখানে।
২. গ্রিক দার্শনিক ক্রিসিপাস
ক্রিসিপাস ছিলেন একজন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক যাকে ‘স্টোয়িকবাদ’ এর দ্বিতীয় জনক হিসেবেও ধরা হয়। তিনি ২৭৯ বিসিতে সিলিসিয়াতে ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ক্রিসিপাসের মৃত্যুও অতিরিক্ত হাসির ফলে হয়েছিলো। একদিন তিনি দেখেন, একটি গাধা তার ডুমুর ফল খাচ্ছে। খেতে খেতে একসময় ডুমুর ফলগুলো গাধাটির গলায় আটকে যায়।
এটা দেখে তিনি তার এক ভৃত্যকে কৌতুক করে গাধাটিকে পানির বদলে ওয়াইন পান করতে দিতে বলেন। ওয়াইন পান করার ফলে গাধাটি মাতালের মতো উদ্ভট সব আচরণ শুরু করে দেয়, যা দেখে ক্রিসিপাস হাসতে শুরু করেন এবং হাসতে হাসতেই একসময় মারা যান।
৩. এলেক্স মিচেল
১৯৭৫ সালে অতিরিক্ত হাসির কারণে এই ইংলিশম্যান মারা যান। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত নরফকের বাসিন্দা। তিনি ‘দ্য গুডিস’ নামক টেলিভিশন শো দেখতে খুব পছন্দ করতেন। এই জনপ্রিয় টিভি সিরিজের কুংফু ক্যাপারস নামের একটি এপিসোড তিনি দেখছিলেন। একটানা ২৫ মিনিট ধরে তিনি হাসতেই থাকেন। সর্বশেষে তিনি বিকট জোরে এক হাসি দিয়ে মারা যান।
এলেক্সের স্ত্রী পরবর্তীতে ওই টিভি সিরিজের পরিচালককে চিঠি লিখে জানান, তার শেষ মুহূর্তটাকে এমন আনন্দময় করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তীতে জানা যায়, অ্যালেক্স কিউটি সিন্ড্রোমে ভুগছিলো। এর অর্থ হলো, তার হার্টের গতিবেগ ঠিক ছিলো না। এ কারণেই সে তার হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
৪. মিসেস ফিজারবার্ট
১৭৮২ সালে তিনি মারা যান অত্যাধিক হাসির কারণে। মিসেস ফিজারবার্ট তার বন্ধুদের সঙ্গে ‘দ্য ব্যাগারস’ অপেরা অনুষ্ঠানটি দেখতে যান। একটি নির্দিষ্ট দৃশ্য চলাকালীন মুহূর্তেই হলে উপস্থিত সবার সঙ্গে তিনিও হেসে ওঠেন। সবাই হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করে শান্ত হলেও তিনি পারেননি।
তিনি এতো উচ্চস্বরে হাসছিলেন যে, থিয়েটারের সবাই তাকে হলরুম থেকে বের হয়ে যেতে অনুরোধ জানায়। তবে বাস্তবতার কঠিন নিদর্শন বোধ হয় এমনই হয়। তিনি সেই হাসির দৃশ্য থেকে আর বের হতে পারেননি। হাসতে হাসতেই মারা যান ওই নারী।
৫. ড্যামনন স্যান উম
২০০৩ সালে ঘুমের ভেতর মৃত্যুবরণ করেন ড্যামনন স্যান উম। তা-ও আবার হাসতে হাসতে! ড্যামনন ছিলেন একজন থাই নাগরিক। তিনি পেশায় আইসক্রিম বিক্রেতা ছিলেন। এক রাতে তিনি ঘুমের ভেতরেই হঠাৎ করে হাসতে শুরু করেন।
প্রায় দুই মিনিট ধরে তিনি হাসতেই থাকেন। একসময় তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি মারা যান। তার স্ত্রী সেসময় স্বামীর ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে জানা যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
অতিরিক্ত হাসিতে মৃত্যু ঘটতে পারে যেভাবে
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, একাধিক কারণে হাসতে হাসতে মৃত্যু ঘটে পারে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, ফুসফুস অকেজো হওয়া, হার্নিয়ায় রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক, মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম স্নায়ুতে চাপ এবং গেলাস্টিক সেইজারের কারণে হাসতে হাসতে মৃত্যু হতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা। ক্যাটাপ্ল্যাক্সি নামে একটি শব্দ আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে। ক্যাটাপ্ল্যাক্সিতে মানুষ পুরোপুরি সজ্ঞানে থেকেও মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
অতিরিক্ত হাসির কারণে ক্যাটাপ্ল্যাক্সি অ্যাটাক হতে পারে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে যে তার ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু তা বন্ধ করার ক্ষমতা থাকেনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মৃত্যু হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত হাসির কারণে ‘সিনকপ’ নামের আরেকটি সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যায় ব্যক্তির দীর্ঘ সময়ের উত্তেজনায় হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড লসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।